সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও রাজনীতি: (Sociology, Political Science and Politics).


সামাজ বিজ্ঞান কাকে বলে?

মানুষ সমাজবদ্ধ জীব তাই আদিমতম যুগ থেকেই সে সংঘবদ্ধভাবে বাস করে আসছে। সমাজ জীবনে মানুষের কার্যকলাপ নিয়ে যে সকল শাস্ত্র আলোচনা করে তাদেরকে সামাজ বিজ্ঞান বলে।

সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্পর্ক:
রাষ্ট্রবিজ্ঞান মানুষের রাজনৈতিক জীবন নিয়ে গভীর আলোচনা করে। এই বিষয়টিতে জ্ঞানলাভ করা সমাজবিজ্ঞানের আলোচনা ছাড়া সম্ভব নয়।
কারণ, সমাজবিজ্ঞান সাধারণভাবে সমাজজীবন নিয়ে আলোচনা করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান যেমন সমাজবিজ্ঞান থেকে রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত, সমাজবন্ধনের সূত্রপাত প্রভৃতি সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করে, তেমনই সমাজবিজ্ঞান রাষ্ট্রবিজ্ঞান থেকে রাষ্ট্রের সংগঠন, কার্যাবলী প্রভৃতি সম্বন্ধে তত্ত্ব গ্রহণ করে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজতত্ত্বের পার্থক্য:
রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজতত্ত্বের আলোচনায় পরিধিগত পার্থক্য বর্তমান। সমাজতত্ত্বের আলোচনার পরিধি রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তুলনায় ব্যাপক। রাষ্ট্রবিজ্ঞান শুধুমাত্র মানুষের রাজনৈতিক জীবনের বিশ্লেষণ করে, কিন্তু সমাজবিদ্যা মানবসমাজের সমগ্র দিক নিয়েই আলোচনা করে। আবার উদ্ভবগত দিক থেকে সমাজবিদ্যা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অনেক পূর্বেই আত্মপ্রকাশ করেছে। কারণ আগে সমাজের জন্ম হয়েছে, তার অনেক পরে রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে।

রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব কি?
রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজতত্ত্বের মধ্যে সম্পর্ক অতি প্রাচীন। সম্প্রতি রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের বিষয়টি রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজতত্ত্বের মধ্যে এক ঘনিষ্ট যোগসূত্র গড়ে তুলেছে। রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব গড়ে ওঠার পিছনে কার্লমার্কস ও ম্যাক্স ওয়েবারের অবদান উল্লেখযোগ্য। রাজনৈতিক আচরণ এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হ'ল রাজনৈতিক সমাজতত্ত্বের বিষয়বস্তু। রাজনৈতিক সমাজতাত্ত্বিকরা সমাজতত্ত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে ভোটদান, আমলাতান্ত্রিক কাঠামো, রাজনৈতিক দল প্রভৃতিকে বিশ্লেষণ করেন।

রাজনীতির সংজ্ঞা?
রাজনীতি হল দ্বন্দ্ব ও সমাধান সম্পর্কিত এমন একটি দ্বান্দ্বিক ক্রিয়া, যার কেন্দ্রীয় বিষয় হল ক্ষমতা। অন্য অর্থে রাজনীতি হল সামাজিক মানুষের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়কে কেন্দ্র করে উদ্ভূত বিরোধ ও বিরোধ নিরসনের প্রক্রিয়া। ইস্টনের মতে, 'মূল্যের কর্তৃত্বসম্পন্ন বরাদ্দই হল রাজনীতি'।

রাজনীতি ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সম্পর্ক:
গ্রীসে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়টির আলোচনার সূত্রপাত হয়। অ্যারিস্টটলের কালজয়ী গ্রন্থ ‘রাজনীতি’ (Politics) অনুসারে বিষয়টির প্রথম নামকরণ হয় রাজনীতি। পরবর্তীকালে সিজউইক, লর্ড অ্যাক্টন, জেলিনেক প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণও বিষয়টিকে রাজনীতি বলেই অভিহিত করেন। কিন্তু বিষয়টির বিষয়বস্তু ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকায় রাজনীতি নামটির পরিবর্তন করে নতুন নামকরণ হয় ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান’ বা ‘Political'। অর্থাৎ রাষ্ট্রবিজ্ঞান হল রাজনীতিরই পরিবর্তিত নাম।

আধুনিক দৃষ্টিতে রাজনীতি কি:
প্রাচীন গ্রীসে 'রাজনীতি' বিষয়টির আলোচনার সূত্রপাত। প্লেটো, অ্যারিস্টটলের মতো দার্শনিকরা তৎকালীন সময়ে রাষ্ট্র সম্পর্কিত যে আলোচনা করেন, সেটাই ‘রাজনীতি' নামে পরিচিত ছিল। পরবর্তীকালে অবশ্য বিষয়টির ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিষয়টির নাম হয় ‘রাষ্ট্রবিজ্ঞান’। আধুনিক দৃষ্টিতে ‘রাজনীতি' হল সংকীর্ণ স্বার্থ পূরণের কলাকৌশল। ফলে বর্তমান রাজনীতির আলোচনা দেশ, কালভেদে স্বতন্ত্র।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন for "সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও রাজনীতি: (Sociology, Political Science and Politics)."