ভারতের নির্বাচন কমিশন: (Election Commission of India).


ভারতের নির্বাচন কমিশন কিভাবে গঠিত হয়?

উঃ- সংবিধানের ৩২৪নং ধারায় বলা হয়েছে যে, একজন মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে ভারতের নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে। তবে রাষ্ট্রপতি ইচ্ছা করলে কমিশনে অন্যান্য কতজন কমিশনার থাকবেন, তা নির্ধারণ করে দিতে পারেন। ভারতীয় সংবিধানের ৩২৪(২) ধারা অনুযায়ী একজন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত হন।  অর্থাৎ সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন একটি একাধিক সদস্য বিশিষ্ট সংস্থা। বর্তমানে নির্বাচন কমিশন একজন মুখ্য নির্বাচনী কমিশনার ও দুইজন নির্বাচনী কমিশনার নিয়ে গঠিত।

ভারতের নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজগুলি কি কি?
উঃ- নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজগুলি হল-
পার্লামেন্ট, রাজ্য আইনসভা, রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচন পরিচালনা করা, ভোটার তালিকা প্রনয়ণ করা, নির্বাচনী আচরণবিধি নির্ধারণ করা, বিভিন্ন দলের নির্বাচনী প্রতীক স্থির করা, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিদের নির্বাচনী ব্যায়ের সীমা নির্ধারণ করা প্রভৃতি।

কখন নির্বাচন কমিশনের সদস্য সংখ্যা ৩জন করা হয়?
উঃ- ১৯৯৩ খ্রীষ্টাব্দের ১ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি শংকর দয়াল শর্মা এক অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে তিনজন সদস্য বিশিষ্ট কমিশন গঠন করে।

নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা কিভাবে অপসারিত হন?
উঃ- নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের অপসারণ পদ্ধতি সংবিধানে লেখা আছে। প্রমাণিত অসামর্থ্য বা অসদাচরণের অভিযোগে পার্লামেন্টের অধিকাংশ এবং উপস্থিত ও ভোটপ্রদানকারী সদস্যদের দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থনে প্রস্তাব গৃহীত হলে রাষ্ট্রপতি মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে পদচ্যুত করতে পারেন। অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের মুখ্য নির্বাচনী কমিশনারের সুপারিশের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি পদচ্যুত করতে পারেন।

নির্বাচন কমিশন সংক্রান্ত ব্যবস্থাদির ত্রুটিগুলি কি কি?
উঃ- 
  •  নির্বাচন কমিশনারদের যোগ্যতা ও কার্যকাল সম্বন্ধে সংবিধানে কিছু বলা হয়নি। ফলে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভাই এর ওপর কর্তৃত্ব করে থাকে।
  •  অবসরগ্রহণের পর নির্বাচন কমিশনারকে অন্যপদে নিয়োগ করা যায়। ফলে সরকারী অনুগ্রহ লাভের জন্য তাঁরা সরকারকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করতে পারেন।
  •  কমিশনের সুপারিশ ও পরামর্শগ্রহণ কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে বাধ্যতামূলক নয়।
  •  নির্বাচন কমিশন গঠন ও পরিচালনার ব্যাপারে অঙ্গরাজ্যের কোনো ক্ষমতা নেই।

নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব কি?
উঃ- সংবিধানের ৩২৪ নং ধারা অনুসারে পার্লামেন্ট, রাজ্য আইনসভা, রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচন সংক্রান্ত কার্যাবলির পরিদর্শন, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের যাবতীয় দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের হস্তে অর্পিত হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন কিভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান  সম্পন্ন করেন?
উঃ- যে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠানের পূর্বে নির্বাচনের তারিখ, মনোনয়নপত্র পেশ ও প্রত্যাহার করার অধিকার, মনোনয়ন পত্রের বিচার করার তারিখ ধার্য করে। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মচারী দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতি ও রাজ্যপালনের অনুরোধ করে নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলগুলিকে এবং জনগণকে কি কি আচরণবিধি মেনে চলতে হবে তা নির্ধারণ করে।

অঙ্গরাজ্যের নির্বাচন কার্য কার তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হয়?
উঃ- বর্তমানে প্রত্যেক অঙ্গরাজ্যে একজন করে মুখ্য নির্বাচনী অফিসার থাকেন। তাঁরা সংশ্লিষ্ট অঙ্গরাজ্যের যাবতীয় নির্বাচনের কার্য পরিচালনা করেন। ১৯৬৬ খ্রীষ্টাব্দে জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে প্রত্যেক জেলার অন্য একজন করে জেলা নির্বাচনী অফিসার নিয়োগের কথা বলা হয়েছে।

মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক কাকে বলে?
উঃ- যে কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচন ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রধানকে মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক বলা হয়।

নির্বাচন কমিশনে সভাপতিত্ব কে করেন?
উঃ- নির্বাচন কমিশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার।

নির্বাচন কমিশানর নিয়োগ করেন কে?
উঃ- নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হন। কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি পার্লামেন্ট কর্তৃক প্রণীত আইন অনুযায়ী কাজ করবেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করে আঞ্চলিক কমিশনার নিয়োগ করতে পারেন।

নির্বাচন কমিশনারদের কার্যকালের মেয়াদ কত?
উঃ- মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের কার্যকালের মেয়াদ হল ছয় বছর। তবে এই কার্যকাল শেষ হওয়ার আগে তাঁদের বয়স ৬৫ বৎসর পূর্ণ হলে তাঁদের পদ ছাড়তে হয়।

মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কাজ কি?
উঃ- ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার যাবতীয় কাজ পরিচালনা করে থাকেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার৷ ভোটার তালিকা প্রনয়ণ, সংশোধন, নির্বাচনী প্রতীক বিতরণ, নির্বাচনী আচরণবিধি নির্ধারণ, নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা ইত্যাদি সমস্ত প্রকারের কাজই মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়।

নির্বাচন সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি কে করেন?
উঃ- নির্বাচন সংক্রান্ত বব্যস্থাদি সম্পর্কে কোনো বিরোধ উপস্থিত হলে নির্বাচন কমিশন সে সম্পর্কে অনুসন্ধানের জন্য অফিসার নিয়োগ করেন। এছাড়া কোনো রাজনৈতিক দলকে স্বীকৃতি দান কিংবা নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে বিরোধ বাঁধলে নির্বাচন কমিশন তার নিস্পত্তি করে। অবশ্য বর্তমানে নির্বাচন সংক্রান্ত যে কোনো বিরোধের নিষ্পত্তির দায়িত্ব আদালতের হস্তে ন্যস্ত হয়েছে।

সাম্প্রতিক কালে ভারতের প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কার্যপ্রণালীর ওপর আলোচনা কর।
উঃ- গত পাঁচ বছর ধরে নানা কারণে আমাদের দেশে এই পদটিকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। পূর্ববর্তী নির্বাচন আধিকারিক টি.এন.সেশনের সময় থেকেই এই ধরণের বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে। একাধিক সাংবিধানিক বিষয়ে মতামত প্রকাশ করার সময় সহকারী নির্বাচন আধিকারিকের সঙ্গে প্রচণ্ড মতভেদ দেখা গিয়েছিল। সারা দেশে সুষ্ঠু এবং দুর্নীতিমুক্ত নির্বাচন পরিচালনার জন্য তিনি চিরপরিচিত পত্র (Photo IdentityCard)-এর প্রবর্তন করেছিলেন।

নির্বাচন পরিচালনার ক্ষেত্রে মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা?
উঃ নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন ধারা এবং উপধারা অনুসারে মুখ্য নির্বাচন আধিকারিকের উপর একাধিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যেমন তিনি—
  •  সহ নির্বাচন আধিকারিকের সঙ্গে আলোচনা করে বিধানসভা এবং লোকসভার নির্বাচনী নির্ঘন্ট প্রকাশ করেন।
  •  কোনো কারণে কোনো ভোট গ্রহণকেন্দ্রে নির্বাচন স্থগিত হলে তিনি পরবর্তী নির্বাচনের দিন এবং কর্মসূচী প্রনয়ণ করেন।
  •  সাংবিধানিক কিংবা আইনগত কারণে নির্বাচন পদ্ধতি বাঞ্চাল হবে কিনা সে বিষয়ে পরামর্শ দান করেন।

প্রথম বহুজন বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশনের মুখ্য নির্বাচন কমিশার এবং অপর সহ- নির্বাচন কমিশনারগণ কে কে ছিলেন?
উঃ- মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ছিলেন টি.এন.সেশন এবং অপর দুই সহ নির্বাচন কমিশনার ছিলেন এম.এস. গিল এবং জি.ভি.জি. কৃষ্ণমূর্তি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন for "ভারতের নির্বাচন কমিশন: (Election Commission of India)."