মনসবদারি প্রথা: (Mansabdar).


মনসব’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ হলো ‘পদমর্যাদা’ এবং মনসবদার হলেন মনসব পদমর্যাদার অধিকারী ব্যক্তি। ভারতে মোগল যুগে যে প্রথা অনুযায়ী প্রতিটি মনসবদার নির্দিষ্ট সংখ্যক সেনা ও ঘোড়া মোতায়েন রাখতেন এবং পদমর্যাদা অনুযায়ী বেতন পেতেন, সেই প্রথাকে 'মনসবদারি প্রথা' বলা হয়। জায়গিরদারী  প্রথার  ফলে  মোগল শাসন ব্যবস্থায়  যে শিথিলতা দেখা দিয়েছিল তা দূর করে শাসন ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে মোগল সম্রাট আকবর ১৫৭৭ খ্রীঃ মনসবদারি প্রথা প্রবর্তন করেন।


মনসবদারি প্রথার বৈশিষ্ট্য:
মনসবদারি ব্যবস্থার কতকগুলি বৈশিষ্ট্য ছিল। সেগুলি হলো-
  • মনসবদাররা যোগ্যতা অনুযায়ী নিয়োগ পেতেন। তাঁদের নিয়োগ, পদোন্নতি, পদচ্যুতি ইত্যাদি সম্রাটের ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল ছিল।
  • মনসবদারদের অধীনস্থ সৈন্য সংখ্যার উপর তাঁদের বেতন ও পদমর্যাদা নির্ধারিত হতো।
  • প্রত্যেক মনসবদারকে নির্দিষ্ট সংখ্যক (১০-১০০০০) সৈন্য রাখতে হত।যুদ্ধ ও অন্যান্য প্রয়োজনের সময় সম্রাটকে সৈন্য দিয়ে সাহায্য করতে মনসবদাররা বাধ্য ছিলেন।
  • মনসবদারি প্রথা বংশানুক্রমিক ছিল না। মনসবদারের মৃত্যু হলে তাঁর সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হতো।
  • মনসবদাররা সেনাবাহিনীর ব্যয় নির্বাহের জন্য সম্রাটের কাছ থেকে নগদ বেতন অথবা জায়গীর পেতেন।
  • আকবরের রাজত্বকালে মনসবদাররা ৩৩ টি স্তরে বিভক্ত ছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল-৭ হাজারি, ৮ হাজারি, ১০ হাজারি মনসবদার।
  • মনসবদারদের এক জায়গীর থেকে আর এক জায়গীরে বদলি করা হতো।

মনসবদারি প্রথার গুরুত্ব:
মনসবদাররা ছিলেন মোগল শাসনব্যবস্থার স্তম্ভ। কারণ শাসনব্যবস্থার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে এরা সাম্রাজ্যের সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতেন। এঁদের দক্ষতা ও সেবার ফলে ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মোগল সাম্রাজ্য সম্প্রসারিত হয়েছিল। তবে সামরিক শক্তির অধিকারী ও উচ্চপদে নিয়োগের ফলে মনসবদার বিশেষ মর্যাদা ও প্রতিপত্তির অধিকারী হয়ে ওঠেন। ফলে এই ব্যবস্থা পরবর্তীকালে মোগল সাম্রাজ্যের অবক্ষয় ও পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন for "মনসবদারি প্রথা: (Mansabdar)."