নীলবিদ্রোহ (১৮৫৯-৬০): Neel Revolt-1859-60.


১৭৭৭ সালে বাংলার লুই বোনার নামে এক ফরাসি বণিক প্রথম নীল চাষ শুরু করেন। ১৮৯২ সালে ভারতে প্রথম নীল কারখানা গড়ে তোলেন কার্ল ব্ল্যাম। এবছরেই কৃত্তিম উপায়ে নীল উৎপাদন শুরু হয়। নীলকরের নিজের কেনা জমিতে ক্ষেত-মজুরদের দ্বারা চাষকে বলা হয় ‘নিজ আবাদী' বা ‘এলাকা চাষ’। রায়ত বা চাষিকে সামান্য পরিমাণ দাদন অর্থাৎ অগ্রিম টাকা দিয়ে রায়তের জমিতেই নীল চাষকে বলা হয় 'বে-এলাকা' বা 'রায়তি' বা 'দাদনী' চাষ। নীলকর সাহেবদের সুবিধার্থে ১৮৩০ সালে 'Regulation-V' (পঞ্চম আইন) নামে একটি আইন পাশ হয়। এই আইন অনুসারে দাদন নিয়ে নীলচাষ না করলে চাষিদের কয়েদ ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা যেত। তাই নীলকর সাহেব ও জমিদার, মহাজনদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বাংলায় নীল বিদ্রোহ শুরু হয় ১৯৫৯ সালে শেষ হয়, ১৮৬০ সালে।


নীলবিদ্রোহের নেতা:
বিষ্ণুচরণ বিশ্বাস ও দিগম্বর বিশ্বাস ছিলেন নীল বিদ্রোহের অন্যতম প্রধান নেতা। তারা নদীয়া জেলার চৌগাছায় নীল বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাই তাদেরকে বাংলার টাইটেলার বলা হয়। তা ছাড়িও জমিদার বাংলার নানাসাহেব রামরতন মল্লিক রায়। রফিক মণ্ডল মালদহে। নীলবিদ্রোহের প্রথম শহীদ বিশ্বনাথ সর্দার (বাংলার রবিনহুড বলা হয়)। ইংরেজরা বলতেন 'বিশে ডাকাত'।

নীল বিদ্রোহের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ও নাটকের অবদান:
মার্শম্যান সম্পাদিত 'সমাচার দর্পণের' মাধ্যমে নীলচাষিদের দুঃখ দুর্দশার কথা প্রথম তুলে ধরা হয়। হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকার মাধ্যমে নীলচাষিদের দুঃখ-দুর্দশার কথা ধারাবাহিকভাবে বর্ণিত হয়। নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র তাঁর নীলদর্পণ নাটকের মাধ্যমে নীলকরদের অত্যাচার তুলে ধরেন। দীনবন্ধু মিত্রের প্রকৃত নাম গান্ধর্ব নারায়ণ মিত্র। মাইকেল মধুসুদন দত্ত নীলদর্পণ নাটকটি ইংরেজী ভাষায় অনুবাদ করেন। কিন্তু বইটি প্রকাশিত হয় রেভারেন্ড জেমস লঙ সাহেবের নামে। নীলকররা মানহানির মামলা করলে রেভারেন্ড লঙ মাইকেল মধুসূদনের নাম গোপন রেখে নিজেই সমস্ত দায়িত্ব নেন। এজন্য লঙ সাহেবকে এক মাস কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জমিদার কালীপ্রসন্ন সিংহ লঙ সাহেবের জরিমানার টাকা দিয়ে দেন। ডার্লস ফ্রিয়-র বই 'The Renesus in India' থেকে জানা যায় দীনবন্ধু মিত্র রবীন্দ্রনাথের অনুপস্থিতিতে পরিচালনা করতেন। যশোর ও নদীয়াকে নীল জেলা বলা হত।

নীল বিদ্রোহের ফলাফল:
নীল বিদ্রোহের ভয়াবহ রূপ দেখে ব্রিটিশ সরকার ১৮৬০ সালে নীল কমিশন গঠন করে। ব্রিটিশের বিরুদ্ধে (গণতন্ত্রের মাধ্যমে) নীলবিদ্রোহ ছিল প্রথম সংঘটিত সফল বিপ্লব।

১৮৩০ সালে উইলিয়াম বেন্টিক পঞ্চম আইন ও সপ্তম আইন প্রবর্তন করেছিলেন তা রদ করে নীলচাষিদের দুর্দশা মোচনের চেষ্টা করেছিলেন।

১৮৬৮ সালে অষ্টম আইন দ্বারা নীল চুক্তি রদ করে। জন পিন্টার গ্রান্ট একাদশ আইন পাশ করে নীল বিদ্রোহ দমন করে।

নীল বিদ্রোহে যুক্ত পত্রিকা:
সমাচার চন্দ্রিকা,  সমাচার দর্পণ, তত্ত্ববোধিনী, হিন্দু প্যাট্রিয়ট ইত্যাদি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন for "নীলবিদ্রোহ (১৮৫৯-৬০): Neel Revolt-1859-60."