মৌর্য সাম্রাজ্যের পতন (Decline of the Mauryas):


অশোকের মৃত্যর পর ৫০ বছরের মধ্যে মৌর্য সাম্রাজ্যের পতন হয় ও ভারতের রাজনৈতিক ঐক্য বিনষ্ট হয়। মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের জন্য পন্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী অশোকের ধর্মনীতি ও ব্রাহ্মণ বিদ্বেষকে দায়ী করেছেন। আবার অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন তাঁর অহিংসা নীতি মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের কারণ। উভয় বক্তব্যই বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ অশোক পরধর্ম সহিষ্ণু ছিলেন এবং এমন কিছু করেননি, যাতে ব্রাহ্মণদের ক্ষতি হয়। বরং তিনি ব্রাহ্মণদের সন্মানের চোখেই দেখতেন। অন্যদিকে অশোক অহিংসা নীতি অনুসরণ করলেও সৈন্যদল ভেঙে দেয়নি। তিনি যুদ্ধ নীতি পরিত্যাগ করেছিলেন, কারণ নতুন করে আর যুদ্ধের প্রয়োজন হয়নি। মৌর্য সাম্রাজ্যের পতনের জন্য গভীরতর রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক কারণ ছিল। যে-কোনো স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের অস্তিত্ব নির্ভর করে সম্রাটের ব্যক্তিগত যোগ্যতা ও দক্ষতার উপর। অশোকের পরবর্তী মৌর্য শাসকদের মধ্যে এই দক্ষতা ও যোগ্যতার অভাব ছিল বলে মৌর্য সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা ও ত্রুটিগুলি তাঁদের সময় মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে এবং মৌর্য সাম্রাজ্যের পতন ডেকে আনে।


মৌর্য সাম্রাজ্যের পতন থেকে (আনুমানিক ১৮৫ খ্রি.পূ.) গুপ্তযুগের অভ্যুত্থান (৩২০ খ্রি.) পর্যন্ত সময়ে ভারতে রাজনৈতিক ঐক্য ছিল না। এই সময়ে ইতিহাসে তিনটি প্রবণতা লক্ষ করা যায়-

  •  উত্তর পশ্চিম ভারতে একের পর এক বৈদেশিক আক্রমণ (গ্রিক, শক, পহ্লব, কুষাণ ইত্যাদি) রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা বিঘ্নিত করে। এই সব বিদেশি আক্রমণকারীদের মধ্যে একমাত্র কণিষ্কের নেতৃত্বে কুষাণরা ভারতে একটি সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে সক্ষম হয়।
  •  আপাতত মগধের গৌরবের দিন অস্তমিত হয় এবং এখানে প্রথমে শুঙ্গ ও পরে কান্ব বংশ একটি সংকীর্ণ অঞ্চলের মধ্যে মগধের অস্তিত্ব বজায় রাখে।
  •  মগধের পতনের সুযোগে কয়েকটি আঞ্চলিক শক্তির উদ্ভব ঘটে। এর মধ্যে কলিঙ্গ (রাজা খারবেল) ও সাতবাহনের নাম বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন for "মৌর্য সাম্রাজ্যের পতন (Decline of the Mauryas):"