মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গির 'ভিত্তি' (Base) ও 'উপরিসৌধ' (Super-structure) বলতে কী বোঝ?


সাধারণভাবে উদারনীতিবাদের সম্পূর্ণ বিপরীত দৃষ্টিতে এই বিশ্ব ও মানব সমাজ সম্পর্কে কার্ল মার্কস ও ফ্রেডারিক এঙ্গেলসের দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদী ব্যাখ্যাই মার্কসবাদ নামে পরিচিত। মার্কস ও এঙ্গেলস-এর 'দ্য ক্লাস স্ট্রাগল ইন ফ্রান্স', 'দ্য সিভিল ওয়ার অব ফ্রান্স', 'রেভলিউশান অ্যান্ড কাউন্টার রেভলিউশান ইন জার্মানি' প্রভৃতি এবং লেনিন রচিত, ‘দ্য স্টেট অ্যান্ড রেভলিউশন', 'দ্য স্টেট', ইম্পিরিয়ালিজম দ্য হায়েস্ট স্টেজ অব ক্যাপিটালিজিম', প্রভৃতি রচনায় মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে রাজনৈতিক পর্যালোচনা পাওয়া যায়। যার মূল কথা হল রাষ্ট্র, সরকার ও রাজনীতি হল সমাজের শ্রেণিবিভাজনের ফসল।

মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গির প্রবক্তরা রাজনৈতিক আলোচনায় ‘ভিত্তি' ও ‘উপরিকাঠামো’ (Base and Super structure) এর তত্ত্ব প্রয়োগ করেছেন। 'ভিত্তি' বলতে বৈষয়িক জীবনের উৎপাদন পদ্ধতিকে বলা হয়।
ইহার দুটি দিক—
  •  উৎপাদন সম্পর্ক।
  •  উৎপাদিকা শক্তি।
উৎপাদন সম্পর্ক বলতে উৎপাদন ব্যবস্থায় জড়িত মানুষে মানুষে যে পারস্পরিক সম্পর্ক।

উৎপাদিকা শক্তি বলতে শ্রমিক, শ্রম, যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল।

উৎপাদিকা শক্তি দ্রুত পরিবর্তনশীল উৎপাদন সম্পর্কের যে ভিত্তি প্রস্তুত করে তার উপর নির্ভর করে গড়ে ওঠে উপরিকাঠামো রাজনীতি, ধর্ম, দর্শন সভ্যতা ও সংস্কৃতি প্রভৃতি। মার্কসবাদী অন্যতম মূলনীতি ঐতিহাসিক বস্তুবাদের অন্যতম বিষয়বস্তু হল ভিত্তি ও উপরিসৌধের পারস্পরিক সম্পর্কের বিশ্লেষণ। উৎপাদিকা শক্তির পরিবর্তনশীলতা যে উৎপাদন সম্পর্কের ভিত্তি (base) তৈরি করে, তার উপরে নির্ভর করে গড়ে—যা মার্কসীয় পরিভাষায় উপরিসৌধ (Super structure) সেই অর্থে উপরিকাঠামো সমাজের অর্থনৈতিক ভিত্তি তথা উৎপাদন সম্পর্কের দ্বারা নির্ধারিত হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন for "মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গির 'ভিত্তি' (Base) ও 'উপরিসৌধ' (Super-structure) বলতে কী বোঝ?"