শাসনতান্ত্রিক প্রতিবিধানের অধিকার:


সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে ৩২ নং ধারা ও যষ্ঠ অধ্যায়ে ২২৬ নং ধারায় শাসনতান্ত্রিক প্রতিবিধানের অধিকার লিপিবদ্ধ হয়েছে। যা মৌলিক অধিকারগুলিকে সুরক্ষিত করে।

সংবিধানের ৩২ নং ধারায় বলা হয়েছে যে, মৌলিক অধিকারগুলি বলবৎ ও কার্যকর করার জন্য নাগরিকরা সুপ্রিমকোর্টের কাছে আবেদন করতে পারে। সুপ্রিমকোর্ট নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলি বলবৎ করার জন্য পাঁচ ধরনের লেখ, নির্দেশ বা আদেশ জারি করতে পারে।

অনুরূপভাবে, হাইকোর্টগুলিও রাজ্যগুলিতে সংবিধানের ২২৬ (১) নং ধারা অনুযায়ী লেখ নির্দেশ বা আদেশ জারি করার ক্ষমতা ভোগ করে।

সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্ট যে পাঁচ ধরনের লেখ, আদেশ ও নির্দেশ জারি করতে পারে সেগুলি হল—

বন্দী প্রত্যক্ষীকরণ:
কোনো বন্দিকে আদালতে সশরীরে হাজির করাকে আইনের পরিভাষায় বলে 'হেবিয়াস করপাস' বা 'বন্দী প্রত্যক্ষীকরণ'। সুপ্রিমকোর্ট বা হাইকোর্ট বন্দির আবেদন অনুযায়ী আটককারী কর্তৃপক্ষকে আদেশ জারি করে বন্দিকে আদালত কক্ষে হাজির করার জন্য নির্দেশ দিতে পারে। আদালত যদি মনে করে যে আবেদনকারীকে বেআইনিভাবে আটক করে রাখা হয়েছে তাহলে সুপ্রিমকোর্ট বা হাইকোর্ট সংশ্লিষ্ট বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারে।

পরমাদেশ:
পরমাদেশের অর্থ হল 'আমরা আদেশ করছি'। এই লেখ জারি করে সুপ্রিমকোর্ট বা হাইকোর্ট কোনো অধস্তন আদালত, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা সরকারকে আইনমাফিক ও জনস্বার্থ সম্পর্কিত কর্তব্য পালনে বাধ্য করতে পারে। অবশ্য রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপালের বিরুদ্ধে পরমাদেশ জারির ক্ষমতা সুপ্রিমকোর্ট বা হাইকোর্টকে দেওয়া হয়নি।

প্ৰতিষেধ:
প্রতিষেধের অর্থ হল ‘নিষেধ করা'। সুপ্রিমকোর্ট বা হাইকোর্ট এই আদেশ জারি করে কোনো অধস্তন আদালতকে তার এক্তিয়ার বহির্ভূত বিষয়ে বিচার প্রক্রিয়া চালিয়ে নিষেধ করতে পারে।

অধিকার পৃচ্ছা:
অধিকার পৃচ্ছা বলতে বোঝায় 'কোন অধিকারে'। কোনো ব্যক্তি যে পদ অধিকার করে থাকে সেই পদের জন্য তার দাবি কতখানি আইনসংগত তা সুপ্রিমকোর্ট বা হাইকোর্ট অধিকার পৃচ্ছার মাধ্যমে বিচার করে দেখে। এক্ষেত্রে দাবি বৈধ না হলে আদালত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে পদচ্যুত করার নির্দেশ দিতে পারে।

উৎপ্রেষণ:
উৎপ্রেষণের অর্থ হল 'বিশেষভাবে জ্ঞাত হওয়া'। উৎপ্রেষণের মাধ্যমে সুপ্রিমকোর্ট বা হাইকোর্ট নিরপেক্ষ বিচারের জন্য কোনো মামলা অধস্তন আদালত থেকে ঊর্ধ্বতন আদালতে স্থানান্তরিত করতে পারে।
বিধিনিষেধ ভারতীয় সংবিধানে উল্লিখিত অন্যান্য মৌলিক অধিকারের মতো শাসনতান্ত্রিক প্রতিবিধানের অধিকারটিও অবাধ নয়।

এই অধিকারের ওপর আরোপিত বিধি নিষেধগুলি হল-
  •  জরুরি অবস্থা ঘোষিত হলে রাষ্ট্রপতি শাসনতান্ত্রিক প্রতিবিধানের অধিকারের ওপর সাময়িকভাবে স্থগিতাদেশ জারি করতে পারেন। এর ফলে ১৯ নং ধারায় উল্লিখিত স্বাধীনতার অধিকারগুলি অকার্যকর হয়ে যায়। সেই সঙ্গে ২০ এবং ২১ নং ধারায় বর্ণিত অধিকারগুলি ছাড়া অন্য সব মৌলিক অধিকার কার্যকর করার জন্য আদালতে আবেদন করার অধিকার স্থগিত থাকে।
  •  ভারতীয় পার্লামেন্ট বা সংসদ কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে এই অধিকারকে সংকুচিত করতে পারে। যেমন,
  1.  সশস্ত্র বাহিনীসহ জনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিযুক্ত অন্যান্য বাহিনীর যথাযথ কর্তব্য সম্পাদন সুনিশ্চিত করার জন্য এইসব বাহিনীর সদস্যগণ কতখানি মৌলিক অধিকার ভোগ করতে পারবে তা সংসদ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে স্থির করে দিতে পারে।
  2.  ভারতের কোনো অঞ্চলে সামরিক শাসন চালু থাকলে সেখানে কোনো সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলারক্ষা বা শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার কারণে কোনো অবৈধ কাজ করলে সংসদ আইনে প্রণয়ন করে তাকে বৈধ ঘোষণা করতে পারে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন for "শাসনতান্ত্রিক প্রতিবিধানের অধিকার:"