বহির্জাত প্রক্রিয়া ও সৃষ্ট ভূমিরূপ: দশম শ্রেণি প্রথম অধ্যায়;
১. বহির্জাত শক্তি কী?
উঃ- ভূপৃষ্ঠের বাইরের শক্তি যা ভূমিরূপের পরিবর্তন ঘটায় তাকে বহির্জাত
শক্তি বলে।
২. বহির্জাত প্রক্রিয়াগুলির প্রধান কাজ কী?
উঃ- বহির্জাত প্রক্রিয়াগুলি ভূমিরূপকে ক্ষয়, বহন এবং সঞ্চয়ের
মাধ্যমে পরিবর্তিত করে।
৩. বহির্জাত প্রক্রিয়াগুলির উদাহরণ কী কী?
উঃ- নদী, হিমবাহ, বায়ু, সমুদ্রতরঙ্গ, আবহাওয়া প্রক্রিয়া
ইত্যাদি বহির্জাত প্রক্রিয়ার উদাহরণ।
৪. নদী বলতে কী বোঝ?
উঃ- কোনো পাহাড়, পর্বত, মালভূমি বা উচ্চভূমির
হিমবাহ নির্গত জলধারা বা বৃষ্টির জলধারা যখন ভূমির ঢাল অনুসরণ করে নির্দিষ্ট খাতের
মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সমুদ্র, হ্রদ বা জলাভূমিতে
এসে মেশে, তখন তাকে নদী বলে। উদাহরণ— গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা প্রভৃতি নদী।
৫. উপনদী ও শাখানদী কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উঃ- উপনদী – প্রধান নদীর গতিপথের
পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে অনেক ছোটো ছোটো নদী এসে প্রধান নদীতে মিলিত হয়, এগুলিকে বলা হয়
উপনদী। উদাহরণ— গঙ্গার উপনদী যমুনা।
শাখানদী – মূলনদী থেকে যেসব নদী শাখা আকারে বের হয়, সেগুলিকে বলা হয়
শাখানদী। উদাহরণ— গঙ্গার শাখানদী ভাগীরথী-হুগলি।
৬. আদর্শ নদী কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উঃ- যে নদীর গতিপথে
ক্ষয়কার্য-প্রধান পার্বত্য প্রবাহ বা উচ্চগতি, বহনকার্য- প্রধান
সমভূমি প্রবাহ বা মধ্যগতি এবং সঞ্চয়কার্য প্রধান বদ্বীপ প্রবাহ বা নিম্নগতি
সুস্পষ্টভাবে লক্ষ করা যায়, সেই নদীকে আদর্শ নদী
বলা হয়। উদাহরণ— ভারতের প্রধান নদী গঙ্গার গতিপথে এই তিনটি অবস্থাই
বিদ্যমান বলে গঙ্গা একটি আদর্শ নদী।
৭. কার্য অনুসারে নদীর প্রবাহকে কী কী ভাগে ভাগ করা যায়?
উঃ- উৎস থেকে মোহানা
পর্যন্ত নদী তার গতিপথে তিনটি কাজ করে-ক্ষয়সাধন, বহন এবং অবক্ষেপণ বা
সঞ্চয়। আর, এই তিন প্রকার কাজের ভিত্তিতে নদীর প্রবাহকে তিনটি
ভাগে ভাগ করা যায় —
- ক্ষয়কার্য – প্রধান উচ্চগতি বা পার্বত্য প্রবাহ।
- বহনকার্য – প্রধান মধ্যগতি বা সমভূমি প্রবাহ।
- সঞ্চয়কার্য – প্রধান নিম্নগতি বা বদ্বীপ প্রবাহ।
৮. নদীর কাজ কী কী?
উঃ- নদীর কাজ তিনটি — ক্ষয়সাধন, বহন এবং অবক্ষেপণ।
- পার্বত্য প্রবাহ বা উচ্চগতিতে নদী প্রধানত ক্ষয়কার্য করে। তা ছাড়া, ওই অংশে নদী ক্ষয়জাত দ্রব্যসমূহ বহনও করে।
- সমভূমি প্রবাহ বা মধ্যগতিতে নদীর প্রধান কাজ বহন। তবে এই অংশে নদী কিছু ক্ষয় (পার্শ্বক্ষয়) এবং অবক্ষেপণও করে।
- আর বদ্বীপ প্রবাহ বা নিম্নগতিতে নদীর প্রধান কাজ হয় সঞ্চয়। তবে এই অংশে নদী অল্প পরিমাণে বহনও করে।
৯. নদীর ষষ্ঠঘাতের সূত্র কী?
উঃ- নদীবাহিত ক্ষয়জাত পদার্থের পরিমাণ নদীর গতিবেগের ষষ্ঠঘাতের সমানুপাতিক। এই সূত্রটিকে নদীর ষষ্ঠঘাতের সূত্র বলে। কোনো একটি নদীর গতিবেগ, জলের পরিমাণ অথবা ভূমির ঢালের বৃদ্ধির কারণে নদীর বহনক্ষমতাও সেই অনুপাতে বেড়ে যায়। যেমন, ঘণ্টায় 2 কিমি বেগে প্রবাহিত নদী যে পরিমাণ বোঝা বহন করতে পারে, সেই নদী দ্বিগুণ বেগে অর্থাৎ ঘণ্টায় ৪ কিমি বেগে প্রবাহিত হলে 26 = 64 গুণ বেশি পরিমাণ বোঝা বহন করতে সক্ষম হবে।
১০. নদী অববাহিকা বলতে কী বোঝ?
উঃ- একটি নদী এবং তার বিভিন্ন উপনদী ও শাখানদীগুলি যে অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, সেই অঞ্চলকে বলা হয় সেই নদীটির অববাহিকা।
১১. নদী জলবিভাজিকা বলতে কী বোঝ?
উঃ- কাছাকাছি অবস্থিত দুই নদী অববাহিকাকে যে উচ্চভূমি পৃথক করে, সেই উচ্চভূমিকে বলা হয় জলবিভাজিকা। সাধারণত পাহাড় বা পর্বত জলবিভাজিকার কাজ করে।
১২. ধারণ অববাহিকা কাকে বলে?
উঃ- অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলধারা খাতের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হলে সেগুলিকে বলে নদী। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নদী দিয়ে গঠিত হয় একটি মূলনদী বা প্রধান নদী। এরকম একটি মূলনদী এবং তার উপনদী ও শাখানদী বিধৌত অঞ্চলকে ওই নদীর ধারণ অববাহিকা বলে। ধারণ অববাহিকায় পতিত অধঃক্ষেপণের জল ওই নদীর মাধ্যমে নিষ্কাশিত হয়।
১৩. নদী উপত্যকা কাকে বলে?
উঃ- দুই উচ্চভূমির মধ্যবর্তী দীর্ঘ ও সংকীর্ণ নিম্নভূমিকে বলা হয় উপত্যকা। আর সেই সংকীর্ণ নিম্নভূমির মধ্যে দিয়ে যখন নদী প্রবাহিত হয়, তখন তাকে বলা হয় নদী উপত্যকা। অর্থাৎ নদী যে অংশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয় তাকে নদী উপত্যকা বলে।
১৪. গিরিখাত কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উঃ- বৃষ্টিবহুল পার্বত্য অঞ্চলে ভূমির ঢাল বেশি থাকে বলে নদীর গতিবেগ খুব বেশি হয়। এই অংশে নদী পার্শ্বক্ষয় অপেক্ষা নিম্নক্ষয় বেশি করে। এর ফলে নদীখাত যথেষ্ট গভীর হয়। নদীখাত খুব গভীর ও সংকীর্ণ হতে হতে যখন ইংরেজি অক্ষর ‘V’ আকৃতির হয়, তখন তাকে বলা হয় গিরিখাত। উদাহরণ— দক্ষিণ আমেরিকার পেরুর এল ক্যানন দ্য কলকা বিশ্বের একটি গভীরতম (3270 মি) গিরিখাত।
১৫. মন্থকূপ বা পটহোল কী?
উঃ- পার্বত্য অঞ্চলে নদীর প্রবল স্রোতের সঙ্গে
বাহিত বড়ো বড়ো পাথরের সঙ্গে নদীখাতের সংঘর্ষের ফলে নদীর বুকে মাঝে মাঝে গর্ত
সৃষ্টি হয়। এগুলিকে মন্থকূপ বা পটহোল বলা হয়।
১৬. কিউসেক কী?
উঃ- নদীর একটি নির্দিষ্ট
অংশ দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে যত ঘনফুট জল প্রবাহিত হয়, তাকেই কিউসেক (cubic
feet per second) বলা হয়।
১৭. কিউমেক কী?
উঃ- নদীর একটি নির্দিষ্ট
অংশ দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে যত ঘনমিটার জল প্রবাহিত হয়, তাকে কিউমেক (cubic
meter per second) বলা হয়।
১৮. নদীবাঁক বা মিয়ান্ডার কাকে বলে?
উঃ- সমভূমিতে ভূমির ঢাল
খুব কম থাকে বলে নদীর গতিবেগও কমে যায়। এইসময় নদীগর্ভে চরের সৃষ্টি হলে নদী তা
এড়িয়ে চলার জন্য এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়। এর মধ্যে যেসব জায়গায় নদীর গতিপথে
সুস্পষ্ট বাঁক (curve) লক্ষ করা যায়, সেগুলিকেই নদীবাঁক (meander)
বলে। নদীবাঁকের একটি পাড় উত্তল ও বিপরীত পাড়টি অবতল হয়।
১৯. অন্তবদ্ধ শৈলশিরা কী?
উঃ- পার্বত্য অঞ্চলে
শৈলশিরাসমূহ নদীর গতিপথে এমনভাবে বাধার সৃষ্টি করে যে, সেই বাধা এড়াতে
নদীকে এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হতে হয়। এর ফলে শৈলশিরাগুলিকে দূর থেকে পরস্পর আবদ্ধ
দেখায় এবং নদী ওই শৈলশিরাগুলির মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেছে বলে মনে হয়। একে অন্তবদ্ধ
শৈলশিরা বলা হয়।
২০. কাসকেড কী?
উঃ- যখন কোনো জলপ্রপাতের
জল অজস্র ধারায় বা সিঁড়ির মতো ঢাল বেয়ে নীচের দিকে নামে, তখন সেই জলপ্রপাতকে
কাসকেড বলে।
যেমন— রাঁচির জোনা জলপ্রপাত।
২১. ক্যানিয়ন কাকে বলে?
উঃ- তুষারগলা জলে উৎপন্ন
কোনো নদী যখন বৃষ্টিহীন শুষ্ক অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় তখন তার দুই পাড়ের
ক্ষয় (পার্শ্বক্ষয়) খুব কম থাকে। এই অবস্থায় নদীর গতিপথে যদি কোমল শিলাস্তর
থাকে তাহলে নদীজলের স্বল্পতার জন্য নদীর উপত্যকায় নিম্নক্ষয় বেশি হয়। এর ফলে
ইংরেজি অক্ষর ‘I’ আকৃতির অত্যন্ত গভীর ও সংকীর্ণ যে গিরিখাতের সৃষ্টি
হয়, তাকে ক্যানিয়ন বলা হয়। যেমন– গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন।
২২. নদীগ্রাস কাকে বলে?
উঃ- কোনো জলবিভাজিকা থেকে
নির্গত পাশাপাশি প্রবাহিত দুটি নদীর মধ্যে যে নদীটি বেশি শক্তিশালী, সেই নদীটি অন্য, নদীটির মস্তকদেশের
অংশবিশেষ গ্রাস করে। এই ঘটনাকে বলা হয় নদীগ্রাস (river capture)।
২৩. নদীর ক্ষয়সীমা বলতে কী বোঝ?
উঃ- নদী ভূপৃষ্ঠে যে
উচ্চতা পর্যন্ত ক্ষয় করতে সক্ষম, সেই উচ্চতাকে নদীর
ক্ষয়সীমা বলে। সাধারণভাবে নদীর ক্ষয়সীমা হল সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা অর্থাৎ নদী
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা পর্যন্ত ক্ষয়কার্য করে। তবে নদীর গতিপথে কোনো কঠিন শিলা
অবস্থান করলে নদী এই কঠিন শিলাস্তরকে বিশেষ ক্ষয় করে না। তখন ওই কঠিন শিলাস্তর
স্থানীয় ক্ষয়সীমারূপে কাজ করে। মরু অঞ্চলে নদীর ক্ষয়সীমা হল প্লায়া হ্রদ।
২৪. অন্তর্জাত শক্তি কী?
উঃ- পৃথিবীর অভ্যন্তরে
সৃষ্ট সংকোচন, প্রসারণ, উত্থান, অবনমন, বিচ্ছেদ, বিস্তৃতি, নির্গমন প্রভৃতি যেসব
প্রক্রিয়ার জন্য ভূপৃষ্ঠে ভূমিরূপ প্রভাবিত বা পরিবর্তিত হয়, সেগুলিকে
ভূ-অভ্যন্তরীণ বা অন্তর্জাত শক্তি বলে। অন্তর্জাত শক্তির প্রভাবে মহাদেশ, মালভূমি, চ্যুতি, ফাটল, গ্রস্ত উপত্যকা, উঠে যাওয়া, নেমে যাওয়া উপকূল
তৈরি হয়। এগুলি ধীর প্রক্রিয়া। অন্য দিকে আগ্নেয়গিরি, লাভা মালভূমি এগুলি
আকস্মিক আলোড়নের ফলে তৈরি হয়। অন্তর্জাত আন্দোলন উল্লম্ব আলোড়ন এবং অনুভূমিক
আলোড়নের মধ্যে দিয়ে হয়।
২৫. বহির্জাত শক্তি কী?
উঃ- বহির্জাত প্রক্রিয়া
হল, যে পদ্ধতিতে ভূপৃষ্ঠের বাইরের শক্তির দ্বারা
ভূমিরূপের পরিবর্তন হয়। নদী, হিমবাহ, বায়ু, ভৌমজল, সমুদ্রতরঙ্গ, আবহবিকার, পুঞ্জক্ষয়— এই প্রক্রিয়াগুলি
ভূপৃষ্ঠকে ক্ষয়, বহন এবং সঞ্চয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন ভূমিরূপ
তৈরি করে। বহির্জাত শক্তিকে এককথায়, ধ্বংসাত্মক শক্তি
বলে।
২৬. ক্রমায়ন শক্তি কাকে বলে?
উঃ- ক্রমায়ন শক্তি বলতে
তিনটি পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে বহির্জাত শক্তির কার্যপ্রক্রিয়াকে বোঝায়। প্রথম
পর্যায়ে পদার্থের বিয়োজন ও ক্ষয়কাজ হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে বিয়োজিত ও
ক্ষয়প্রাপ্ত পদার্থসমূহ অপসৃত বা পরিবাহিত হয়। তৃতীয় পর্যায়ে অপসৃত বা পরিবাহিত
দ্রব্যগুলি ভূপৃষ্ঠের নিচু অংশে সঞ্চিত হয়।
২৭. অবরোহণ প্ৰক্ৰিয়া কী?
উঃ- বহির্জাত
প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী শক্তিগুলি যেভাবে ভূপৃষ্ঠের পরিবর্তন করে সেই
প্রক্রিয়াকে অবরোহণ প্রক্রিয়া বলে। আবহবিকার বা বিচূর্ণীভবন, পুঞ্জক্ষয় এবং
অন্যান্য ক্ষয় প্রক্রিয়াগুলি অবরোহণ ক্রিয়ার ফল। কোন্ অঞ্চলে কী ধরনের অবরোহণ
হবে তা নির্ভর করে সেখানকার জলবায়ু, শিলার প্রকৃতি, ক্ষয়কারী শক্তির
কার্যক্ষমতা ইত্যাদির ওপর।
২৮. আরোহণ প্রক্রিয়া কাকে বলে?
উঃ- আরোহণ প্রক্রিয়া
বলতে ভূপৃষ্ঠের ওপর সঞ্চয়, অবক্ষেপণ এবং অধঃক্ষেপণের মাধ্যমে ভূমিরূপের নির্মাণ
প্রক্রিয়াকে বোঝায়। এই পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে নিম্নভূমির উচ্চতা বেড়ে যায়।
পর্বতের পাদদেশে সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ তৈরি হয়। নদী অববাহিকায় পলল ব্যজনী ও
প্লাবনভূমির মতো ভূমিরূপ তৈরি হয়।
২৯. মানুষ এবং অন্যান্য জীব কীভাবে বহির্জাত শক্তির প্রক্রিয়া হিসেবে কাজ
করে?
উঃ- মানুষসহ সমগ্র
জীবজগতও কিন্তু ক্ষয় এবং সঞ্চয়ে অংশগ্রহণ করে। জলাভূমি, লেগুনে যেসব শ্যাওলা, গাছপালা জন্মায়, ফুল, পাতা, ফল পচে গিয়ে জৈব
পদার্থ তৈরি করে, তা দিয়ে জলাভূমি ভরাট হয়। মানুষ নিজেই জলাভূমি ভরাট
করে, নদী, সমুদ্রে বাঁধ দিয়ে
ভূমিভাগের সঞ্চয় প্রক্রিয়াকে জারি রাখে।
৩০. সমপ্ৰায় ভূমি কাকে বলে?
উঃ- নদীর ক্ষয়কার্যের
ফলে এই ধরনের ভূমিরূপ তৈরি হয়। আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চলে নদীর জলপ্রবাহ ভূমিভাগকে
ক্ষয় করে এবং কঠিন শিলা কম ক্ষয় পায়। দীর্ঘদিন ধরে উচ্চভূমি ক্ষয় পেতে পেতে নীচু
সমভূমি সৃষ্টি করে কিন্তু এর মধ্যে কঠিন শিলাগুলি ক্ষয় না পেয়ে উচ্চভূমিরূপে
অবস্থান করে। এই প্রায় সমতল ভূমিভাগের নাম সমপ্রায় ভূমি। ছোটোনাগপুরের সমভূমির
মধ্যে পরেশনাথ ও পাঞ্চেত পাহাড় দুটি মোনাডনক।
৩১. নদীর মধ্যগতি বলতে কী বোঝ?
উঃ- নদী যখন পার্বত্য অঞ্চল
ছেড়ে সমভূমিতে এসে পড়ে, সেই সমভূমি অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদীর প্রবাহকে
মধ্যগতি বলে। মধ্যগতিতে নদীর প্রধান কাজ বহন এবং সঞ্চয় করা। গঙ্গানদীর হরিদ্বার
থেকে মুরশিদাবাদের ধুলিয়ান পর্যন্ত প্রবাহপথটি মধ্যগতির মধ্যে পড়ে।
৩২. মধ্যগতিতে নদীর প্রধান কাজ কী?
উঃ- নদীর তিনটি গতিতে
ভিন্ন ভিন্ন কাজ করলেও মধ্যগতিতে নদী প্রধানত বহন কাজ করে। তবে স্থানভেদে এই
প্রবাহে ক্ষয় এবং সঞ্চয় কাজও করে থাকে। যদিও এই দুই প্রকার কাজের পরিমাণ কম।
অর্থাৎ মধ্যগতিতে নদী বেশি বহন করে এবং অল্প ক্ষয় এবং বেশ কিছুটা সঞ্চয় করে।
৩৩. নদীর নিম্নগতি বা বদ্বীপ প্রবাহ কাকে বলে?
উঃ- নদী যে স্থান থেকে
একেবারে সমভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, সেই প্রবাহকে
নিম্নগতি বলে। মূলত নদী সমুদ্র সমতলে এসে পৌঁছলেই নদীর নিম্নগতি শুরু হয়। মোহানা
পর্যন্ত এই গতিপথ বজায় থাকে। গঙ্গানদীর মুরশিদাবাদের ধুলিয়ানের পর থেকে
গঙ্গাসাগরের মোহানা পর্যন্ত অংশ বদ্বীপ প্রবাহের অংশ।
৩৪. প্ৰপাতকূপ কী?
উঃ- পার্বত্য অংশে নদীর
ঢাল বেশি থাকে বলে জল প্রবল বেগে নীচে নামে এবং জলতলের পার্থক্য সৃষ্টি হলে সেখানে
জলপ্রপাত গঠিত হয়। এই জলপ্রপাতের জল নীচে যেখানে এসে আঘাত করে সেখানে প্রায়
গোলাকার গর্ত সৃষ্টি হয়, যা প্রপাতকূপ নামে পরিচিত। প্রপাতকূপ সৃষ্টিতে
নদীবাহিত বোঝাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
৩৫. মিয়েন্ডার ভূমিরূপ নামকরণ কেন হয়েছে?
উঃ- সমভূমি প্রবাহে নদীর
যে-কোনো বাঁককেই মিয়েন্ডার বলা হয়। তুরস্কের মিয়েড্রেস নদীতে অসংখ্য নদীবাঁক
দেখা যায়। ওই নদীবাঁকের কথা মনে রেখেই পৃথিবীর যাবতীয় নদীবাঁককে মিয়েন্ডার বলা
হয়।
৩৬. লোহাচড়া দ্বীপটি ডুবে যাচ্ছে কেন?
উঃ- হুগলি নদীর মোহানায়
লোহাচড়া বদ্বীপটি ক্রমশ ডুবে যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে গবেষকরা কয়েকটি কারণ
নির্দেশ করেছেন—
- সমুদ্রজলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি।
- উপকূলের ক্ষয়।
- প্রবল ঘূর্ণিঝড় প্রভৃতি, এছাড়া ম্যানগ্রোভের ধ্বংস এই দ্বীপের খুব ক্ষতি করছে।
৩৭. ফারাক্কা ব্যারেজের সাথে লোহাচড়া দ্বীপের সম্পর্ক কী?
উঃ- আপাত দৃষ্টিতে কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ ফারাক্কা ব্যারেজ হল মুরশিদাবাদের একটি বাঁধ আর লোহাচড়া দ্বীপটি হল বঙ্গোপসাগরের মধ্যে সম্প্রতি ডুবে যাওয়া একটি দ্বীপ। কিছু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, 1974 সালে ফারাক্কা ব্যারেজ তৈরি হওয়ার পর থেকে হুগলি নদীর মধ্যে দিয়ে গঙ্গায় অধিকাংশ জল প্রবাহিত হচ্ছে। বর্ষাকালে আরও বেশি জল এসে সুন্দরবনের দ্বীপগুলিকে জলমগ্ন করে তুলছে। যে কারণে, লোহাচড়া দ্বীপের মতো আরও দ্বীপের অদৃশ্য হওয়ার ঘটনা ঘটছে।
৩৮. দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ সম্পর্কে কী জান?
উঃ- হাড়িয়াভাঙা নদীর মোহানা থেকে 2 কিমি দূরে এই দ্বীপের অবস্থান। ভৌগোলিক অবস্থা অনুযায়ী এটি 21° 37′ 00″ উত্তর এবং 89° 08′ 30″ পূর্ব অবস্থানে রয়েছে। 1970 সালে ভোলা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে এই দ্বীপের খুব ক্ষতি হয়। 1974 সালে এর আয়তন ছিল 2500 বর্গমিটার (উপগ্রহ চিত্র থেকে)। বর্তমানে এটি সম্পূর্ণ নিমজ্জিত দ্বীপ।
৩৯. ঘোড়ামারা দ্বীপের বর্তমান অবস্থা কেমন?
উঃ- কলকাতা থেকে মাত্র 150 কিমি দূরে বঙ্গোপসাগরের মধ্যে এটি একটি সুন্দরবনের সাধারণ দ্বীপ। পরীক্ষায় দেখা গেছে, 1951 সালে ঘোড়ামারা দ্বীপটির আয়তন ছিল 38.23 বর্গকিমি, 2011 সালে এর আয়তন দাঁড়ায় 4.37 বর্গকিমি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই দ্বীপটিও সম্পূর্ণ ডুবে যাবে।
৪০. নদীর পুনর্যৌবন লাভ বলতে কী বোঝ?
উঃ- ভূমিঢালের পরিবর্তন হলে অনেকসময় নদীর নিম্নক্ষয় করার ক্ষমতা আবার ফিরে পাওয়াকে নদীর পুনর্যৌবন লাভ বলে। ভূ-আন্দোলনের জন্য নদীর ক্ষয়সীমার পরিবর্তন, নদীগ্রাস প্রভৃতি কারণে নদীতে জলের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং কোনো কারণে নদীর বোঝার পরিমাণ কমে গেলে নদী পুনর্যৌবন লাভ করে।
৪১. নিক পয়েন্ট কী?
উঃ- নদীর পুনর্যৌবন লাভের ফলে নতুন ঢাল ও পুরোনো ঢালের সংযোগস্থলে যে খাঁজ তৈরি হয় তাকে নিক পয়েন্ট বলে। এই নিক পয়েন্টে জলতলের পার্থক্য সৃষ্টি হয় বলে সেখানে জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়।
৪২. অবঘর্ষ প্রক্রিয়া কী?
উঃ- অবঘর্ষ কথাটির অর্থ ‘ঘর্ষণজনিত ক্ষয়’। সাধারণভাবে বলা যায়— নদী, হিমবাহ, বায়ুপ্রবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা পরিবাহিত শিলাখণ্ড পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষে বা ঘর্ষণে লিপ্ত হলে ভূপৃষ্ঠের শিলাস্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এই ঘটনাকে বলা হয় অবঘর্ষ। অবঘর্ষ ক্ষয়ের ফলে শিলার ক্ষয় দ্রুততর হয় এবং শিলা মসৃণ হয়।
৪৩. মন্থকূপ কাকে বলে?
উঃ- উচ্চগতি বা পার্বত্য প্রবাহে নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে নদী উপত্যকায় যেসব ভূমিরূপ গঠিত হয়, সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল মন্থকূপ। নদীর প্রবল স্রোতের সঙ্গে বাহিত প্রস্তরখণ্ড, নুড়ি, বালি প্রভৃতি যখন ঘুরতে ঘুরতে অগ্রসর হয়, তখন এগুলির সঙ্গে নদীখাতের সংঘর্ষ ঘটে এবং এর ফলে (অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায়) নদীখাতে ছোটো ছোটো প্রায় গোলাকার গর্ত সৃষ্টি হয়। এগুলিকে বলা হয় মন্থকূপ।
৪৪. খরস্রোত কী?
উঃ- নদীর গতিপথে কঠিন ও কোমল শিলাস্তর একটির পর একটি লম্বালম্বিভাবে থাকলে কঠিন শিলাস্তরের তুলনায় কোমল শিলাস্তর তাড়াতাড়ি ক্ষয়ে গিয়ে কয়েকটি ধাপ বা সিঁড়ির সৃষ্টি করে। নদী তখন একটির পর একটি ধাপ পেরিয়ে দ্রুত নীচে নেমে আসে ও খরস্রোতের সৃষ্টি হয়। উদাহরণ— আফ্রিকার বিখ্যাত নীলনদের গতিপথে খাতুম থেকে আসোয়ান পর্যন্ত 6টি স্থানে এরকম খরস্রোতের সৃষ্টি হয়েছে।
৪৫. হিমরেখা কাকে বলে?
উঃ- উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে
বা মেরু অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে তুষারপাত হয়। যে কাল্পনিক সীমারেখার ঊর্ধ্বে
সারাবছর তুষার জমে থাকে এবং যে সীমারেখার নীচে তুষার গলে জল-এ পরিণত হয়, সেই সীমারেখাকে বলা
হয় হিমরেখা। হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে হিমরেখার গড় উচ্চতা স্থানবিশেষে প্রায় 4000
থেকে 5000 মিটার। তবে তীব্র ঠান্ডার কারণে মেরু অঞ্চলে হিমরেখা
প্রায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতায় পাওয়া যায়।
৪৬. হিমবাহকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায় এবং কী কী?
উঃ- হিমবাহকে ৩টি ভাগে
ভাগ করা যায়–
ক) পার্বত্য বা উপত্যকা হিমবাহ, খ) মহাদেশীয় হিমবাহ
এবং গ) পর্বত পাদদেশের হিমবাহ।
৪৭. পার্বত্য হিমবাহ বা উপত্যকা হিমবাহ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উঃ- যেসব হিমবাহ সুউচ্চ
পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন উপত্যকার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়, সেইসব হিমবাহকে বলা
হয় পার্বত্য হিমবাহ বা উপত্যকা হিমবাহ। উদাহরণ— হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের অধিকাংশ হিমবাহ এই শ্রেণির, যেমন— কুমায়ুন হিমালয়ের
গঙ্গোত্রী হিমবাহ এবং সিকিম-দার্জিলিং হিমালয়ের জেমু হিমবাহ।
৪৮. মহাদেশীয় হিমবাহ বলতে কী বোঝ? উদাহরণ দাও।
উঃ- উচ্চভূমি-নিম্নভূমি
নির্বিশেষে মহাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল যখন বরফে ঢাকা থাকে, তখন তাকে বলা হয়
মহাদেশীয় হিমবাহ। উদাহরণ– বর্তমানে গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিকায় বরফে ঢাকা
যে বিস্তীর্ণ অঞ্চল দেখা যায়, তা মহাদেশীয়
হিমবাহের উদাহরণ।
৪৯. হিমানী সম্প্রপাত বলতে কী বোঝ?
উঃ- অনেক সময় পার্বত্য
অঞ্চলের চলমান হিমবাহ থেকে বিশাল বরফের স্তূপ ভেঙে ভেঙে প্রচণ্ড বেগে নীচে এসে
পড়ে। একে বলা হয় হিমানী সম্প্রপাত (avalanches)। এগুলি এক এক সময় এত বড়ো হয় যে, এর পতনে নিকটবর্তী
অঞ্চলে ভূমিকম্প অনুভূত হয় এবং এর গতিপথে গাছপালা, বাড়িঘর যা কিছু পড়ে
সব ধ্বংস হয়ে যায়।
৫০. পর্বতের পাদদেশীয় হিমবাহ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
উঃ- হিমবাহ যখন উঁচু
পর্বতের ওপর থেকে নীচে, অর্থাৎ পর্বতের পাদদেশ অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে, তখন তাকে বলা হয়
পর্বত পাদদেশের হিমবাহ বা পাদদেশীয় হিমবাহ। উদাহরণ— আলাস্কার মালাসপিনা হিমবাহ।
৫১. হিমশৈল কাকে বলে?
উঃ- সমুদ্রে ভাসমান
বিশালাকৃতি বরফের স্তূপকে হিমশৈল (iceberg) বলা হয়। সাধারণত
মহাদেশীয় হিমবাহ থেকে বিশাল বরফের স্তূপ আলাদা হয়ে সংলগ্ন সমুদ্রে হিমশৈলরূপে
ভেসে বেড়ায়। হিমশৈলের কেবল 1/10 ভাগ জলের ওপর দেখা যায়।
বিশ্ববিখ্যাত জাহাজ টাইটানিক তার প্রথম যাত্রাতেই এরকম একটি হিমশৈলের সঙ্গে ধাক্কা
লেগে গভীর সমুদ্রে ডুবে যায়।
৫২. প্রাপ্ত গ্রাবরেখা কী?
উঃ- উপত্যকা হিমবাহের
সঙ্গে যেসব পাথর, নুড়ি, কাঁকর প্রভৃতি
পরিবাহিত হয় সেগুলি ধীরে ধীরে হিমবাহের নীচে, দুই পাশে ও প্রান্তভাগে
একটু একটু করে জমা হতে থাকে। সঞ্চিত এই পদার্থগুলিকে বলাহয় গ্রাবরেখা (moraines)। এগুলির মধ্যে হিমবাহ-বাহিত নুড়ি, কাঁকর, পাথর প্রভৃতি যখন
হিমবাহের সামনে বা শেষপ্রান্তে সঞ্চিত হয়, তাকে প্রান্ত
গ্রাবরেখা বলা হয়।
৫৩. এসকার
কী?
উঃ- পার্বত্য হিমবাহ বা উপত্যকা হিমবাহ পর্বতের পাদদেশে বা নিম্নভূমিতে সহায়কার্যের ফলে যেসব ভূমিরূপ গড়ে তোলে সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল এসকার (esker)। যখন হিমবাহ বাহিত পাথর, বালি, কাঁকর প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে স্বল্প উঁচু (উচ্চতা প্রায় 15 মিটার), শাখা-প্রশাখাযুক্ত আঁকাবাঁকা শৈলশিরা গঠন করে, তাকে এসকার বলা হয়।
৫৪.
পিরামিড শৃঙ্গ কাকে বলে?
উঃ- পার্বত্য হিমবাহের উৎসমুখে
ক্ষয়কার্যের ফলে পর্বতগাত্রে যেসব সার্কের সৃষ্টি হয় সেগুলি দেখতে হাতল লাগানো
ডেক চেয়ারের মতো হয়। একটি পর্বতের বিভিন্ন দিকে পাশাপাশি তিন-চারটি ‘সার্ক’ তৈরি হলে মাঝখানের তীক্ষ্ণ শিরাযুক্ত
শৃঙ্গটি খাড়া এবং পিরামিডের মতো দেখতে হয়। তাই এই ধরনের শৃঙ্গকে পিরামিড শৃঙ্গ
বলা হয়। আল্পস পর্বতের ম্যাটারহর্ন একটি বিখ্যাত পিরামিড শৃঙ্গ।
৫৫.
বোল্ডার ক্লে কী?
উঃ- পার্বত্য হিমবাহ বা উপত্যকা হিমবাহ
পর্বতের পাদদেশে বা নিম্নভূমিতে সঞ্জয়কার্যের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপ গড়ে
তোলে এবং সেইসব ভূমিরূপকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। যেমন, হিমবাহ গলে যাওয়ার পর হিমবাহ-বাহিত
বালি, কাদা ও
পাথর একসঙ্গে সঞ্চিত হলে তাকে বোল্ডার ক্লে বা হিমকর্দ বলা হয়।
৫৬.
ড্রামলিন কী?
উঃ- পার্বত্য হিমবাহ বা উপত্যকা হিমবাহ
পর্বতের পাদদেশে বা নিম্নভূমিতে সঞয়কার্যের মাধ্যমে ড্রামলিন (drumlin) ভূমিরূপ তৈরি করে। হিমবাহের
সঞ্চয়কার্যের ফলে যখন বালি, কাদা ও পাথর একসাথে সঞ্চিত হয়ে টিলার মতো উঁচু হয়ে থাকে, যা দুর থেকে ওলটানো নৌকার মতো দেখতে
লাগে, তাকে
ড্রামলিন বলা হয়।
৫৭.
ইরাটিক বা আগাম্বুক কী?
উঃ- হিমবাহের সঞ্চয়কার্যের মাধ্যমে সৃষ্ট
বিভিন্ন ভূমিরূপের মধ্যে অন্যতম হল আগামুক বা ইরাটিক। হিমবাহের সঙ্গে বহুদূর থেকে
বিভিন্ন আকৃতির শিলাখণ্ড এসে কোনো স্থানে সজ্জিত হয়ে যে ভূমিরূপ গড়ে ওঠে, তাকে আগামুক বা ইরাটিক বলা হয়। এই
ভূমিরূপের শিলাধর্মের সঙ্গে স্থানীয় শিলাধর্মের কোনো মিল থাকে না। কাশ্মীরের
পহেলগাম-এর উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে আগামুক দেখতে পাওয়া যায়।
৫৮.
হিমবাহ কী? কোন্ কোন্
হিমবাহ থেকে গঙ্গা ও যমুনার উৎপত্তি হয়েছে?
উঃ- বছরের পর বছর হিমরেখার ঊর্ধ্বে জমা হতে
থাকা তুষার এক সময় বিশাল বরফের চাঁইতে পরিণত হয় এবং মাধ্যাকর্ষণের টানে নীচের
দিকে নামতে থাকে। একেই বলা হয় হিমবাহ (glacier) বা বরফের নদী।
গঙ্গার
উৎপত্তি গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে এবং যমুনার উৎপত্তি যমুনোত্রী হিমবাহ থেকে।
৫৯. আইস
শেল্ফ কাকে বলে?
উঃ- ভূমিভাগের সাথে সংযুক্ত পুরু ও ভাসমান
বরফের আস্তরণকে আইস শেলফ (ice shelf) বলে।
উদাহরণ– অ্যান্টার্কটিকার
রস ও রনি আইস শেল্ফ।
৬০. ‘ডিমের ঝুড়ি’ ভূমিরূপ কাকে বলে?
উঃ- উপত্যকায় হিমবাহের সঞ্জয়কার্যের ফলে
অনেক সময় বালি, কাদা, পাথর অর্থাৎ বোল্ডার ক্লে বা হিমকর্দ সারিবদ্ধভাবে
টিলার আকারে এমনভাবে অবস্থান করে যে দূর থেকে ওগুলি দেখতে ঠিক ওলটানো নৌকা বা
ওলটানো চামচের মতো মনে হয়, এগুলিকে
ড্রামলিন বলে। যেসব জায়গায় একসঙ্গে অনেক ড্রামলিন অবস্থান করে সেই জায়গাকে দূর
থেকে ডিম ভরতি ঝুড়ির মতো দেখতে লাগে। এজন্য ড্রামলিন অধ্যুষিত অঞ্চলকে ‘ডিমের ঝুড়ি’ ভূমিরূপ বলা হয়। আয়ারল্যান্ড ও
স্কটল্যান্ডে এই ধরনের ভূমিরূপ দেখা যায়।
৬১. বরফ
আস্তরণ কী?
উঃ- অবস্থান অনুসারে পৃথিবীর সব হিমবাহকে
তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়—
1. উপত্যকা
হিমবাহ, 2. মহাদেশীয়
হিমবাহ এবং 3. পর্বত
পাদদেশের হিমবাহ। এই তিন ধরনের হিমবাহের মধ্যে মহাদেশীয় হিমবাহের আর এক নাম বরফ
আস্তরণ (ice sheet)। উত্তর মেরু এবং দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে আছে বরফের স্তূপ
বা বরফ-ক্ষেত্র। যেহেতু বরফের এই স্তূপ আস্তরণের (sheet) মতো দুই মেরু অঞ্চল, বিশেষত উত্তর মেরুপ্রদেশের অন্তর্গত
গ্রিনল্যান্ড এবং দক্ষিণ মেরুপ্রদেশের অন্তর্গত অ্যান্টার্কটিকাকে আবৃত করে রেখেছে, তাই তাকে বরফ আস্তরণ বলা হয়ে থাকে।
৬২. U- আকৃতির উপত্যকা বা হিমদ্রোণি কাকে বলে?
উঃ- সুউচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে ক্ষয়কার্যের
মাধ্যমে হিমবাহ বিভিন্ন ধরনের ভূমিরূপ সৃষ্টি করে। তাদের মধ্যে U- আকৃতির উপত্যকা বা হিমদ্রোণি (U-shaped valley) অন্যতম। হিমবাহ যে উপত্যকার মধ্য দিয়ে
প্রবাহিত হয়, সেখানে
হিমবাহের পার্শ্বক্ষয় ও নিম্নক্ষয় প্রায় সমানভাবে হয় বলে উপত্যকাটির আকৃতি ‘U’-এর মতো হয়। তাই একে U- আকৃতির উপত্যকা বা হিমদ্রোণি বলা হয়।
৬৩.
ফিয়র্ড কী?
উঃ- ফিয়র্ড (fiord) হল সমুদ্রোপকূলে অবস্থিত হিমবাহ উপত্যকা। সমুদ্রোপকূলে হিমবাহ তার উপত্যকাকে এমন গভীরভাবে ক্ষয় করে যে, উপত্যকা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকেও নীচু হয়ে যায়। এরপর হিমবাহ অপসারিত হলে সেই গভীর উপত্যকাগুলি সমুদ্রের জলে ভরে যায়। হিমবাহের ক্ষয়কার্যের দ্বারা সৃষ্ট কিন্তু বর্তমানে সমুদ্রের জলে পূর্ণ এই ধরনের উপত্যকাকে বলা হয় ফিয়র্ড। উদাহরণ– নরওয়ে, সুইডেন এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা উপকূলে অনেক ফিয়র্ড দেখা যায়।
৬৪. করি
বা সার্ক কাকে বলে?
উঃ- সংজ্ঞা– হিমবাহের উৎসমুখী ক্ষয়কার্যের কারণে
উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে সার্ক (cirques) বা করি সৃষ্টি হয়।
প্রক্রিয়া– হিমবাহ যখন উঁচু পার্বত্য অঞ্চল থেকে
নীচের দিকে নামে, তখন
একইসঙ্গে হিমবাহের অবঘর্ষ ও উৎপাটন প্রক্রিয়ার দরুন পর্বতের ঢালের পিছনদিকে খাড়া
দেয়াল, মধ্যভাগে
অর্ধবৃত্তাকার গহ্বর এবং সামনে ধাপসমন্বিত হাতল লাগানো ডেক চেয়ারের মতো ভূভাগের
সৃষ্টি হয়।
অন্য নাম– স্কটল্যান্ডের স্থানীয় ভাষাতে একে করি এবং ফরাসিতে সার্ক বলা হয়।
৬৫. এরিটি
কীভাবে সৃষ্টি হয়?
উঃ- পার্বত্য উপত্যকা দিয়ে হিমবাহ যখন
নীচের দিকে নামে, তখন যুগপৎ
বা একইসঙ্গে অবঘর্ষ ও উৎপাটন প্রক্রিয়ায় পর্বতগাত্রে হাতল-দেওয়া ডেক চেয়ারের
মতো অর্ধবৃত্তাকার গর্ত সৃষ্টি করে। একে বলা হয় সার্ক বা করি। এইভাবে হিমবাহের
ক্ষয়কার্যের ফলে যখন একটি পর্বতের দুই পাশে দুটি করি গঠিত হয়, তখন তার মাঝখানের উঁচু খাড়া ছুরির
ফলার মতো পর্বতশিরাকে বলা হয় এরিটি (arete)।
৬৬. কেম
কাকে বলে?
উঃ- হিমবাহের শেষ প্রান্তে বা প্রান্ত
গ্রাবরেখায় যখন বরফ গলে যায়, তখন হিমবাহের মধ্যে থাকা পাথর, নুড়ি, কাঁকর, কাদা প্রভৃতি স্তূপাকারে সঞ্চিত হয়ে
ত্রিকোণাকার বদ্বীপের মতো ভূমিরূপ সৃষ্টি করে। এই ভূমিরূপকে বলা হয় কেম।
৬৭. প্যাটারনস্টার
হ্রদ কাকে বলে?
উঃ- উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে হিমদ্রোণির নিম্ন
অংশে অসংখ্য সিঁড়ি বা ধাপের সৃষ্টি হয়। যখন এই ধাপগুলির ভূমিতলের ঢাল উপত্যকার
দিকে না হয়ে বিপরীত দিকে অর্থাৎ পর্বতগাত্রের দিকে হয়, তখন হিমবাহ গলা জল ধাপ বেয়ে উপত্যকার
মধ্যে না এসে সেই ধাপ বা সিঁড়িতেই জমে গিয়ে হ্রদের সৃষ্টি করে। এই ধরনের হ্রদকে
প্যাটারনস্টার হ্রদ বলা হয়।
৬৮. নব ও
কেটুল কী?
উঃ- নব– হিমবাহ-বাহিত নুড়ি, শিলাখণ্ড প্রভৃতি জলপ্রবাহের সঙ্গে
বাহিত হয়ে বহিঃধৌত সমভূমির ওপর টিলার আকারে অবস্থান করলে সেই টিলাগুলিকে নব বলে।
কেটুল – বহিঃধৌত সমভূমির মধ্যস্থিত বিশালাকৃতির
বরফখণ্ড গলে গিয়ে যেসব গহ্বরের সৃষ্টি হয়, সেগুলিকে বলা হয় কেটল। পরবর্তীকালে
ওইসব গহ্বরে হিমবাহ গলা জল জমে যে হ্রদের সৃষ্টি হয়, সেই হ্রদকে বলা হয় কেট্ল হ্রদ।
উত্তর
ইউরোপের অনেক স্থানে নব ও কেটুলের অবস্থান লক্ষ করা যায় এবং ওইসব অঞ্চলের
ভূমিরূপকে ‘নব ও কেট্ল
সমন্বিত ভূমিরূপ’ বলা হয়।
৬৯.
হিমবাহের গতিবেগ কীরূপ?
উঃ- হিমবাহের গতি অত্যন্ত ধীর। ভূমির ঢাল, বরফের পরিমাণ, ঋতুগত পার্থক্য, পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি, বরফের নমনীয় অবস্থা, এসবের ওপর নির্ভর করে হিমবাহ এগোতে
থাকে। হিমবাহকে বরফের নদী বলা হলেও সে অতি ধীর গতিতে এগোতে থাকে। আল্পসের হিমবাহ
প্রতিদিন গড়ে 5.5 সেমি
এগিয়ে যায়। হিমালয়ের হিমবাহ প্রতিদিন 2.5-7.5 সেমি করে অগ্রসর হয়।
৭০.
হিমবাহ জিভের মতো এগিয়ে যায় কেন?
উঃ- হিমবাহ যখন প্রবাহিত হয় তখন দুই পাশ
অপেক্ষা মধ্যবর্তী অংশ দ্রুত এগিয়ে যায়। কারণ মাঝখানের হিমবাহ কেবল হিমবাহের
তলদেশ ঘর্ষণের জন্য কেবল বাধা পায়। অন্যদিকে পার্শ্ব হিমবাহ উপত্যকায়
পার্শ্ববর্তী অংশ এবং তলদেশ উভয়ের দ্বারাই বাধাপ্রাপ্ত হয়। এজন্য মধ্যের হিমবাহ
একটু এগিয়ে যায়। একে দেখতে অনেকটা জিভের মতো মনে হয়। একে স্নাউট (snout) বলে।
৭১. ফার্ন
কী?
উঃ- যেখানে ভূপৃষ্ঠে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের
নীচে থাকে, সেখানে
বৃষ্টির বদলে তুষারপাত হয়। ওই সব তুষার যেখানে জমে যায় সেখানে তুষারক্ষেত্র গঠিত
হয়। দেখা গেছে, ওই সব
তুষারকণাগুলি পাখির পালকের মতো বা পেঁজা তুলোর মতো ঝরে পড়ে। এগুলিকে নেভে (neve) বলে। এই নেভের ওপর আবার তুষারপাত হলে
ওপরের তুষারের চাপে নীচের তুষারের বাতাস বের হয়ে যায়। এতে তুষারে দৃঢ়তা বাড়ে।
একে আবহবিদেরা ফার্ন বলেন।
৭২. করি
অঞ্চলে অসংখ্য ফাটল তৈরি হয় কেন? অথবা, ক্রেভাস ও
বার্গসুন্ড বলতে কী বোঝ?
উঃ- করির পিছনের দিকের দেওয়ালটি খুব
খাড়াই থাকে। এই অত্যন্ত খাড়া ঢালের মধ্যে দিয়ে নামার সময় হিমবাহ ও পর্বত
গাত্রের মধ্যে ফাঁকের সৃষ্টি হয়। একে বার্গস্রুন্ড বলে। আবার করির ঢাল খুব বেশি
বলে উপত্যকার দিকে নামার সময় হিমবাহের মধ্যে ফাঁকের সৃষ্টি হয়। হিমবাহের মধ্যে এই
ফাটলকে ক্রেভাস বলে।
৭৩. ভার্ব
কী?
উঃ- বহিঃবিধৌত সমভূমি অংশের সূক্ষ্ম বালি
হ্রদের নীচের জমা হয়। ওই সব সূক্ষ্ম বালিরাশিকে ভার্ব বলে। ভার্বের মধ্যে গোলাকার
দাগ থাকে। ওই দাগগুলি এক-একটা বছরকে চিহ্নিত করে।
৭৪.
হোয়েলব্যাক বা কুঁজ কী?
উঃ- পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের ক্ষয়কার্যের
ফলে কোনো কোনো স্থানে চারিদিকে মসৃণ ও খাড়া ঢালবিশিষ্ট টিবি দেখা যায়। একে
হোয়েলব্যাক বা কুঁজ বলে। স্কটল্যান্ডের হুয়া সাউন্ড অঞ্চলে এ ধরনের ভূমিরূপ দেখা
যায়।
৭৫.
ওয়াদি কাকে বলে?
উঃ- মরু অঞ্চলের ক্ষুদ্রাকার, অনিত্যবহ ও ক্ষণস্থায়ী প্রকৃতির নদীগুলির
নাম ওয়াদি (wadi)। ওই নদীগুলির খাত প্রায় থাকে না বললেই চলে এবং অধিকাংশ সময় শুষ্ক থাকে।
হঠাৎ বৃষ্টি হলে, ওয়াদিগুলি
কিছুদূর প্রবাহিত হওয়ার পর বালির মধ্যে হারিয়ে যায়। সৌদি আরবের আল বাতেন
বিখ্যাত ওয়াদি।
৭৬.
পেডিমেন্ট বলতে কী বোঝ?
উঃ- মরু অঞ্চলে প্রবহমান বায়ুতে ছোটো ছোটো
পাথরখণ্ড, বিভিন্ন
আয়তনের বালিকণা, কোয়ার্টজ
কণা ইত্যাদি থাকে। ফলে এই বায়ুর ক্ষয়কার্যের ক্ষমতা বেশি এবং এজন্য নানাধরনের
ভূমিরূপ গঠিত হয়। পেডিমেন্ট হল এরকমই একটি ভূমিরূপ। মরু অঞ্চলের পর্বতের
পাদদেশসমূহ বায়ুর এবং অস্থায়ী জলধারা ওয়াদির ক্ষয়কার্যে প্রস্তরময় সমভূমিতে
পরিণত হলে পেডিমেন্ট (pediment) বা পর্বত
পাদদেশের সমভূমি গঠিত হয়।
৭৭.
বালিয়াড়ি কাকে বলে?
উঃ- বালিপূর্ণ বায়ুর গতিপথে গাছপালা, প্রস্তরখণ্ড, ঝোপঝাড় বা অন্য কোনো বাধা থাকলে তাতে
প্রতিহত হয়ে বায়ুবাহিত বালির কিছু অংশ সেখানে সঞ্চিত হয়ে উঁচু ঢিপির মতো
অবস্থান করে। এই ধরনের ভূমিরূপকে বালিয়াড়ি (sand dune) বলা হয়।
৭৮.
বারখান কী?
উঃ- বালিয়াড়ি বিভিন্ন প্রকার হয়, যেমন— তির্যক বালিয়াড়ি, অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি প্রভৃতি। এর
মধ্যে যেসব বালিয়াড়ি প্রবহমান বায়ুর গতিপথের সঙ্গে আড়াআড়িভাবে একেবারে আধখানা
চাঁদের আকারে গড়ে ওঠে, সেগুলিকে
বারখান (barchan) বলা হয়।
বারখান প্রকৃতপক্ষে তির্যক বালিয়াড়ির একটি রূপ। এগুলি সাধারণত চলমান বা
ভ্রাম্যমাণ হয় এবং উচ্চতা 15 থেকে 30 মিটার
পর্যন্ত হতে পারে।
৭৯.
হামাদা কী?
উঃ- কোনো কোনো সময় মরুভূমির যেসব স্থান
বন্ধুর ও শিলাগঠিত বা পাথুরে, সেখানে বায়ুপ্রবাহের অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় ক্ষয়কার্যের জন্য স্থানটি
প্রায় সমতল ও মসৃণ আকার ধারণ করে। সাহারা মরুভূমিতে এই ধরনের শিলাগঠিত অবন্ধুর
মালভূমি বা প্রায় সমতলভূমিকে হামাদা বলা হয়।
৮০. কোন্
কোন্ অঞ্চলে বালিয়াড়ি দেখা যায়?
উঃ- কোনো স্থানে বালিয়াড়ি গড়ে ওঠার
প্রধান দুটি শর্ত হল — বালিপূর্ণ
বায়ুপ্রবাহ এবং মাঝে মাঝে কাঁটাগাছ বা ঝোপঝাড়-সমৃদ্ধ বিস্তীর্ণ উন্মুক্ত স্থান।
সাধারণত এই ধরনের অনুকূল অবস্থা উষ্ণ মরু অঞ্চল, শুষ্ক অঞ্চল এবং সমুদ্রোপকূলে বিরাজমান
বলে এই তিনটি অঞ্চলে বালিয়াড়ি দেখা যায়।
৮১. গৌর
কী?
উঃ- মরুভূমিতে বায়ুর ক্ষয়কার্যের জন্য যত
ধরনের ভূমিরূপ গঠিত হয়, তার মধ্যে
গৌর অন্যতম। সাধারণত মরু অঞ্চলে বায়ুর অবঘর্ষ প্রক্রিয়ায় ক্ষয়কার্যের জন্য
বৃহদাকৃতি শিলাখণ্ডের নিম্নাংশের কোমল শিলা যত বেশি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, ঊর্ধ্বাংশের কঠিন শিলা তত হয় না। এর
ফলে ব্যাঙের ছাতার মতো আকৃতিবিশিষ্ট শিলাখণ্ডের সৃষ্টি হয়। একে গৌর বলা হয়।
৮২.
লোয়েস কী?
উঃ- বায়ুবাহিত পীত রঙের চুনময় প্রবেশ্য
সূক্ষ্ম কণাসমূহ লোয়েস (loess) নামে
পরিচিত। এরূপ সূক্ষ্ম কণাসমূহ মরুভূমি অথবা বহিঃধৌত সমভূমি থেকে বহু দূরে সঞ্চিত
হয়ে মালভূমি অথবা সমভূমি গঠন করে।
উদাহরণ— উত্তর চিনের হোয়াং হো নদীর অববাহিকায় লোয়েস সমভূমি দেখা যায়।
৮৩.
মরূদ্যান কী?
উঃ- অনেক সময় মরু অঞ্চলে বায়ুর
ক্ষয়কার্যে বিরাট এলাকা জুড়ে বালি অপসারণের ফলে অবনমিত অংশের গভীরতা ভূগর্ভের
জলস্তর পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এর ফলে সেখানে তখন সহজেই জলের সন্ধান পাওয়া যায় এবং
(আর্দ্র মাটি এবং জলের সুবিধার জন্য) ওখানে নানাধরনের গাছ জন্মায়, সবুজ উদ্যান সৃষ্টি হয়। এইভাবে ধু-ধু
মরুভূমির মাঝে গাছপালায় ঢাকা যে সবুজ ভূমিটি গড়ে ওঠে, তাকে মরুদ্যান (oasis) বলা হয়।
৮৪.
ভেন্টিফ্যাক্ট কী?
উঃ- একদিক থেকে বায়ুপ্রবাহের জন্য
বায়ুবাহিত পদার্থের সাথে শিলার অবঘর্ষ ক্ষয়ের ফলে যদি শিলার একদিক
(বায়ুপ্রবাহের দিক) মসৃণ ও ধারালো এবং বাকি দিকগুলি অমসৃণ বা এবড়োখেবড়ো হয়, তাকে বলা হয় ভেন্টিফ্যাক্ট।
৮৫.
ড্রেইকান্টার কী?
উঃ- বিভিন্ন দিক থেকে বায়ুপ্রবাহের জন্য
বায়ুবাহিত পদার্থের সাথে শিলার অবঘর্ষের ফলে যখন শিলাখণ্ডের তিনদিক মসৃণ হয়, তখন তাকে ড্রেইকান্টার বলে।
৮৬.
ধ্রিয়ান কাকে বলে?
উঃ- মরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের গতি
পরিবর্তনের কারণে একস্থানে সজ্জিত বালিরাশি অন্যস্থানে সরে সরে যায়। তাই এর নাম
অস্থায়ী বা চলমান বালিয়াড়ি। রাজস্থানের মরু অঞ্চলে এই ধরনের অস্থায়ী
বালিয়াড়িকে ধ্রিয়ান বলা হয়।
৮৭. সিফ
বালিয়াড়ি কাকে বলে?
উঃ- সিফ শব্দটির আরবি অর্থ তলোয়ার।
মরুভূমির তলোয়ারের মতো সুদীর্ঘ বালিয়াড়ি হল সিফ বালিয়াড়ি।
গঠন
প্রক্রিয়া– মরু
অঞ্চলে বায়ুর গতিপথের সাথে সমান্তরালভাবে সোজা এবং দীর্ঘ তরবারির মতো এই
বালিয়াড়ি গড়ে ওঠে। এই বালিয়াড়ি প্রকৃতপক্ষে অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি। বিজ্ঞানী
ব্যাগনল্ডের মতে, বারখা
থেকেই সিফ বালিয়াড়ি গঠিত হয়।
৮৮.
ভ্রাম্যমাণ বালিয়াড়ি কী?
উঃ- মরু অঞ্চলে প্রবাহিত বায়ুর গতি
পরিবর্তনের কারণে বালিয়াড়ি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরে সরে যায়। এই ধরনের
বালিয়াড়িকে ভ্রাম্যমাণ বা চলমান বা অস্থায়ী বালিয়াড়ি বলা হয়। রাজস্থানের মরু
অঞ্চলে এই চলমান বালিয়াড়িকে ধ্রিয়ান বলা হয়।
৮৯. ব্লো
আউট কাকে বলে?
উঃ- মরু অঞ্চলে বায়ুর অপসারণ প্রক্রিয়ায়
গঠিত কয়েক মিটার গভীর, কিন্তু
বিশালাকার আয়তনের গর্তগুলিকে ব্লো আউট বলে। এগুলি সাধারণত বালিয়াড়ি অথবা বালির
সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত অঞ্চলে দেখা যায়। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ সমভূমি
অঞ্চলে অসংখ্য ব্লো আউট দেখা যায়।
৯০. মরু
হ্রদ বা প্লায়া লেক কাকে বলে?
উঃ- মরু অঞ্চলের লবণাক্ত জলের হ্রদগুলির
নাম প্লায়া (playa)। এই জাতীয় হ্রদগুলি আফ্রিকার অ্যাটলাস পর্বতে শটস এবং ভারতের থর মরুভূমিতে
ধান্দ নামে পরিচিত। অনেক সময় মরু অঞ্চলের অনিত্যবহ ও ক্ষণস্থায়ী নদীগুলি এসে
প্লায়ায় পতিত হয়।
উদাহরণ— মিশরের কাতারা অবনমিত অঞ্চলে এইরকম
অনেক হ্রদ দেখা যায়।
৯১.
বাজাদা কী?
উঃ- পেডিমেন্টের নীচের মৃদু ঢালযুক্ত সমতল
অংশকে বাজাদা (bajada) বলে।
পর্বতের পাদদেশের পললশঙ্কুগুলি বিস্তৃত ও পরস্পর সংযুক্ত হয়ে বাজাদা তৈরি করে।
বাজাদার উপাদান হল — পলি, কাদা ও নুড়ি। সাহারা মরুভূমির আটলাস
পর্বতের পাদদেশে বাজাদা গড়ে উঠেছে।
৯২.
বায়ুর অবঘর্ষ প্রক্রিয়া ভূমির সামান্য ওপরে কার্যকরী হয় কেন?
উঃ- ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন অংশটি সামান্য উঁচু
নীচু হয় এবং ভূমিতে ঝোপঝাড় থাকায় বায়ুর গতিবেগ কম হয়। এতে বায়ুবাহিত
পদার্থগুলি বাধা পায়। আবার ওপরের অংশে বায়ুর গতিবেগ বেশি থাকলেও বায়ুবাহিত
পদার্থের পরিমাণ কম হয়। তাই অবঘর্ষ প্রক্রিয়া ভূপৃষ্ঠ থেকে সামান্য উঁচু অংশে
বেশি কার্যকরী হয়।
৯৩. পুচ্ছ
বালিয়াড়ি কাকে বলে?
উঃ- মরুভূমি অঞ্চলে প্রধান বালিয়াড়ির
পিছনে যে বালিয়াড়ি তৈরি হয়, তাকে পুচ্ছ বালিয়াড়ি বলে। প্রধান বালিয়াড়ি অংশ থেকে বালি উড়ে এসে ওই
ধরনের বালিয়াড়ি গঠিত হয়। পুচ্ছ বালিয়াড়ির সামনে থাকে প্রধান বালিয়াড়ি।
৯৪.
নক্ষত্র বালিয়াড়ি কী?
উঃ- মরুভূমিতে বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন
দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়। এতে একজায়গায় ছোটো ছোটো অনেকগুলি বালিয়াড়ি গড়ে
ওঠে। অনেক সময় এদের মাঝখানের বালিয়াড়িটি উঁচু হয়ে ওঠে ও উঁচু অংশ থেকে তিন-চার
দিকে বালিয়াড়ি প্রসারিত হয়ে নক্ষত্রের আকৃতি ধারণ করে। একেই নক্ষত্র বালিয়াড়ি
বলে।
৯৫. গাসি
কাকে বলে?
উঃ- সিফ বালিয়াড়িগুলি একে অপরের
সমান্তরালে গড়ে ওঠে। দুটি সিফ বালিয়াড়ির মাঝখানের অংশকে করিডর বলে। এইসব
করিডরগুলি বালিবিহীন বা রেগ ছাদ বিচ্ছিন্ন থাকে। এইসব করিডরকে সাহারায় গাসি বলে।
মরুভূমিতে এইসব করিডরগুলি যাতায়াতের পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৯৬. আর্গ
কাকে বলে?
উঃ- মরুভূমির বিশাল অঞ্চল জুড়ে কেবলমাত্র
বালি ও পাথর দ্বারা গঠিত বিশাল অঞ্চলকে আর্গ বলে। যেখানে বায়ু অধিক কার্যকরী এবং
বালির পরিমাণ বেশি সেখানে আর্গ গঠিত হয়।
৯৭. মধ্য
অক্ষাংশের মরুভূমির নাম লেখো।
উঃ- এশিয়ার গোবি, তাকলা মাকান, তুর্কিস্তানের মরুভূমি এবং উত্তর
আমেরিকার কলোরাডো মরুভূমি হল মধ্য অক্ষাংশের মরুভূমি। নিম্ন অক্ষাংশের তুলনায়
মধ্য অক্ষাংশে মরুভূমির পরিমাণ বেশি।
৯৮.
কয়েকটি নিম্ন অক্ষাংশের মরুভূমির নাম করো।
উঃ- মোটামুটি 20°-30° উভয় অক্ষাংশের মধ্যে এইসব মরুভূমিগুলি
রয়েছে। এইসব মরুভূমিগুলি মহাদেশের পশ্চিম দিকে গড়ে উঠেছে। আফ্রিকার মরক্কো থেকে
সাহারা, আরবের
মরুভূমি, বেলুচিস্তানের
মরুভূমি এবং ভারতের এই নিম্ন অক্ষাংশের মরুভূমি। এ ছাড়া উত্তর আমেরিকার সোনোরান, পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার মরুভূমি আফ্রিকার
কালাহারি মরুভূমি রয়েছে।
৯৯.
ডেজার্ট পেডমেন্ট কী?
উঃ- দীর্ঘদিন ধরে মরুভূমির বালি অপসারিত
হয়ে ক্রমশ নীচু হয়ে গেলে ভৌমজল ভূপৃষ্ঠের বাইরে বেরিয়ে আসে। এভাবে মরুদ্যানের
সৃষ্টি হয়। হালকা সূক্ষ্ম বালির কণা অপসারিত হয়ে যে মোটা নুড়ি, পাথর পড়ে থাকে, সেই রকম ভূমিরুপকে ডেজার্ট পেভমেন্ট
বলে।
১০০.
অ্যাডোব কী?
উঃ- উত্তর আমেরিকার মিসিসিপি ও মিসৌরি নদীর
উপত্যকা অঞ্চলে লোয়েস সঞ্চয় দেখা দেয়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এগুলি প্লিসটোসিন যুগে হিমবাহের
গ্রাবরেখার বালি ও বহিঃবিধৌত সমভূমির বালি উড়ে এসে এমন লোয়েস ভূমি গঠন করেছে।
এইরকম লোয়েসকে উত্তর আমেরিকায় অ্যাডোব বলে।
এই পোস্টের PDF DOWNLOAD করতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন ⤵️
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন for "বহির্জাত প্রক্রিয়া ও সৃষ্ট ভূমিরূপ: দশম শ্রেণি প্রথম অধ্যায়;"