নদী সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর;


১. নদী কাকে বলে?

উঃ- প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট কোন স্বাভাবিক প্রবাহমান জলধারা অভিকর্ষের টানে ভূমির ঢাল অনুসারণ করে খাতের মধ্যে দিয়ে বয়ে যায়, তখন তাকে নদী বলে।

২. নদীর উৎস কাকে বলে?
উঃ- সাধারণত পাহাড়-পর্বত বা মালভূমির মতো উঁচু জায়গা, যেখান থেকে নদীর সৃষ্টি হয়, সেই স্থানকে ওই নদীটির উৎস বলে।

৩. নদীর মোহানা কাকে বলে?
উঃ- সাধারণত নদীর প্রবাহপথ যেখানে শেষ হয় (সাগর, উপসাগর, হ্রদ, জলাশয় বা অন্য কোনো বড়ো নদী), সেই স্থানটিকে ওই নদীটির মোহানা বলে।

৪. ধারণ অববাহিকা কাকে বলে?
উঃ- উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল বা পাহাড়ি অঞ্চল থেকে অসংখ্য ছোটো ছোটো জলধারা একত্রে মিলিত হয়ে নদীরূপে পাহাড়ের পাদদেশে নেমে আসে। জলধারা -সহ মূল নদীটি যে বিশাল অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় সেই অঞ্চলকে ওই নদীর ধারণ অববাহিকা বলে।

৫. জলবিভাজিকা কাকে বলে?
উঃ- যে উচ্চভূমি বা পর্বতশ্রেণি একটি নদী অববাহিকা থেকে অন্য একটি নদী অববাহিকাকে আলাদা করে দেয়, সেই উচ্চভূমি বা পর্বতশ্রেণিকে জলবিভাজিকা বলে।

৬. উপনদী কাকে বলে?
উঃ- প্রধান নদীর গতিপথের পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে যেসব ছোটো ছোটো নদী প্রধান নদীতে এসে মিলিত হয়, সেগুলিকে ওই প্রধান নদীটির উপনদী বলে।

৭. শাখানদী কাকে বলে?
উঃ- মূলনদী থেকে যেসব নদী শাখার মতো বেরিয়ে অন্য কোথাও গিয়ে মেশে, তাকে ওই প্রধান নদীটির শাখানদী বলে।

৮. নদী উপত্যকা কাকে বলে?
উঃ- উৎস থেকে মোহানা পর্যন্ত নদী যে খাতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং নদী যার মধ্য দিয়ে জল বয়ে নিয়ে যায়, সেই অংশটিকে নদী উপত্যকা বলে।

৯. নদী অববাহিকা কাকে বলে?
উঃ- নদী, তার শাখা নদী ও উপনদী -সহ উৎস থেকে মোহানা পর্যন্ত যে বিস্তীর্ণ অংশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়, সেই সমগ্র ভূমিভাগকে নদী অববাহিকা বলে।

১০. অন্তর্বাহিনী নদী কাকে বলে?
উঃ- যে নদী দেশের মধ্যে কোনো উচ্চভূমি বা হ্রদ থেকে সৃষ্টি হয়ে ওই দেশের অভ্যন্তরেই কোনো হ্রদ বা জলাশয়ে গিয়ে মেশে, তাকে অন্তর্বাহিনী নদী বলে।

১১. নিত্যবহ নদী কাকে বলে?
উঃ- উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল থেকে সৃষ্ট যেসব নদীতে সারাবছর জল থাকে, সেইসব নদীগুলিকে নিত্যবহ নদী বলে।

১২. অনিত্যবহ নদী কাকে বলে?
উঃ- যেসব নদীতে বর্ষাকাল ছাড়া সারাবছর জল থাকে না, সেইসব নদীগুলিকে অনিত্যবহ নদী বলে।

১৩. গিরিখাত (Gorge) কাকে বলে?
উঃ- আর্দ্র জলবায়ুযুক্ত পার্বত্য অঞ্চলের ‘সরু’এবং ‘গভীর’ নদী উপত্যকা ইংরেজি ‘v’ অক্ষরের মতো দেখতে হলে তাকে গিরিখাত বলে।

১৪. ক্যানিয়ন (Canyon) কাকে বলে?
উঃ- বৃষ্টিহীন পার্বত্য অঞ্চলে বা শুষ্ক অঞ্চলের অত্যন্ত সংকীর্ণ এবং সুগভীর গিরিখাতকে ক্যানিয়ন বলে।

১৫. জলপ্রপাত (Waterfall) কাকে বলে?
উঃ- নদীর গতিপথে শক্ত আর নরম পাথর অনুভূমিকভাবে থাকলে, নদী নরম পাথরকে বেশি ক্ষয় করার জন্য শক্ত এবং নরম পাথরের মধ্যে ধাপের সৃষ্টি হয় আর নদী শক্ত পাথরের ওপর থেকে নীচে ঝাঁপিয়ে পড়ে। একে জলপ্রপাত বলে।

১৬. নদী বাঁক বা মিয়েন্ডার (Meander) কাকে বলে?
উঃ- নদীর মধ্যপ্রবাহে ভূমির ঢাল কমে যাওয়া এবং জলের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে নদী খুবই আঁকাবাঁকা পথে প্রবাহিত হয়। নদীর এই আঁকাবাঁকা পথকে নদী বাঁক বা মিয়েন্ডার বলে।

১৭. নদীদ্বীপ (River Island) কাকে বলে?
উঃ- নদীর মধ্যপ্রবাহে ভূমির ঢাল কমে যাওয়ায় নদীর বহন ক্ষমতাও কমে যায়। তখন জলপ্রবাহের সঙ্গে বয়ে আনা পলি, বালি, নুড়ি, কাঁকর নদীর মধ্যে সঞ্চিত হয়ে যে দ্বীপ সৃষ্টি করে, তাকে নদীদ্বীপ বলে।

১৮. অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ (Ox-bowlake) কাকে বলে?
উঃ- নদী বাঁকের খাড়া পাড়ের দিকে জলস্রোত বেশি থাকায় ক্ষয় হয় এবং তার উলটো দিকের ঢালু পাড়ে সঞ্চয় বেশি হয়। নদীর বাঁকের পরিমাণ বাড়লে বা জলের পরিমাণ বাড়লে কখনো কখনো নদী বাঁকের একটা অংশ মূল নদী থেকে আলাদা হয়ে যায়। আলাদা হওয়া অংশটি ঘোড়ার খুরের মতো দেখতে হয় বলে একে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ বলে।

১৯. প্লাবনভূমি (Flood Plain) কাকে বলে?
উঃ- নদী তার নিম্নপ্রবাহে ক্ষয়কার্যের পরিবর্তে সঞ্চয়কার্য করে। এর ফলে নদী অগভীর হয়ে যায়। বর্ষায় অতিরিক্ত জল অগভীর নদীখাতের দু-কূল ছাপিয়ে বন্যার সৃষ্টি করে। নদীর দুধারের বিস্তীর্ণ জমিতে বন্যার সময় পলি সঞ্চিত হয়ে যে উর্বর সমভূমি গঠিত হয়, তাকে প্লাবনভূমি বলে।

২০. বদ্বীপ (Delta) কাকে বলে?
উঃ- মোহানার কাছে নদীর বহন করে আনা পলি, জমা হয়ে চড়া সৃষ্টি হয়। নদীর স্রোত তখন ভাগ হয়ে চড়ার দুদিক দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। ফলে বাংলার মাত্রাহীন ওল্টানো ‘ব’ (A) অক্ষরের মতো বা গ্রিক অক্ষর ডেল্টা (4) -এর মতো যে ভূমিরূপ সৃষ্টি করে, তাকে বদ্বীপ বলে।

২১. দোয়াব কি?
উঃ- পারসি শব্দ দোয়াব, যার 'দো' অর্থে দুই, 'আব' অর্থে জল। পাশাপাশি প্রবাহিত দুটো নদীর মধ্যবর্তী ভূখণ্ডকে দোয়াব বলে।

২২. আন্তর্জাতিক নদী কাকে বলে?
উঃ- যে নদী তার উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত প্রবাহ পথে একাধিক স্বাধীন দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়, তাকে আন্তর্জাতিক নদী বলে।

২৩. আদর্শ নদী কাকে বলে?
উঃ- যে নদীর তিনটি গতিপথ সুস্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়, সেই নদীকেই আদর্শ নদী বলে।

২৪. জলচক্র কাকে বলে?
উঃ- নদী জলে চক্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।  বৃষ্টির জল নদীর মধ্য দিয়ে সাগরে গিয়ে মেশে। সাগরের জল সূর্যের প্রচণ্ড তাপে প্রথমে বাষ্পীভূত হয়ে শীতল ও ঘনীভূত হয় এবং বৃষ্টির নদী বা সমুদ্রের ফিরে আসে। নদী ও সাগরের জলের চক্রাকার আবর্তনকে জলচক্র বলে।

২৫. খাঁড়ি কি?
উঃ- নিম্ন গতি বা বদ্বীপ প্রবাহে মোহনার কাছে নদীর গতিবেগ যদি বেশি থাকে তাহলে পলি রাশির স্রোতের সঙ্গে সমুদ্র চলে যায়। এর ফলে নদীতে কোন বদ্বীপ সৃষ্টি হয় না। হলে মোহনায় জোয়ারে নোনা জল নদীতে ঢুকে ফানেলের মত আকৃতি সৃষ্টি করে। এই চওড়া আকৃতির মোহনাকে খাঁড়ি বলে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন for "নদী সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর;"