ঔপনিবেশিক কর্তৃক প্রতিষ্ঠা: অষ্টম শ্রেণীর তৃতীয় অধ্যায় (Free Pdf Download).


১. ব্রিটিশরা কত খ্রিস্টাব্দে মুসলিপট্টনম নামে ঘাঁটি তৈরি করে?

উঃ- ১৬১১ খ্রিস্টাব্দে।

২. ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সুরাটে কত খ্রিস্টাব্দে ঘাঁটি তৈরি করে?
উঃ- ১৬১২ খ্রিস্টাব্দে।

৩. কেরালা ও অন্ত্রপ্রদেশের বেশ কিছু অঞ্চল, কর্ণাটক ও দক্ষিণ উড়িষ্যার বিভিন্ন অঞ্চল কোন্ প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত ছিল?
উঃ- মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি

. মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির গ্রীষ্মকালীন প্রশাসনিক কেন্দ্র কোনটি ছিল?
উঃ- ওটাকামুন্দ

৫. প্রথমদিকে বোম্বাই প্রেসিডেন্সি কী নামে পরিচিত ছিল?
উঃ- পশ্চিম প্রেসিডেন্সি।

৬. কত খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানির অধিকার পায়?
উঃ- ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে।

৭. বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, আসাম ও ত্রিপুরা অঞ্চল মিলে যে প্রেসিডেন্সি গড়ে উঠেছিল, তার নাম কী?
উঃ- বাংলা প্রেসিডেন্সি।

৮. বাংলা প্রেসিডেন্সি অপর কী নামে পরিচিত ছিল?
উঃ- ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ।

৯. কত খ্রিস্টাব্দে রেগুলেটিং অ্যাক্ট পাস হয়?
উঃ- ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে।

১০. রেগুলেটিং অ্যাক্ট অনুযায়ী গভর্নর জেনারেল পদের মেয়াদ ছিল কত বছর?
উঃ- ৫ বছর।

১১. কত খ্রিস্টাব্দেমির জাফর কোম্পানির কাছ থেকে কলকাতা থেকে কুলপি পর্যন্ত ২৪টি পরগনার জমিদ পায়?
উঃ- ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দের।

১২. রেগুলেটিং অ্যাক্ট অনুসারে বাংলা গভর্নর পদ পরিবর্তিত হয়ে কী হয়?
উঃ- গর্ভনর জেনারেল।

১৩. ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পিট প্রণীত আইন মোতাবেক কী গঠিত হয়?
উঃ- বোর্ড অফ কন্ট্রোল।

১৪. কত খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তরফে নতুন বিচারব্যবস্থা চালু করা হয়?
উঃ- ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে।

১৫. প্রথম প্রধান বিচারপতি কে ছিলেন?
উঃ- স্যার এলিজা ইম্পে।

১৬. কত খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ইম্পিরিয়াল কোর্ট তৈরি হয়?
উঃ- ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে।

১৭. কত খ্রিস্টাব্দে সুপ্রিমকোর্টের বিচারকের সংখ্যা চারজনের বদলে তিনজন করা হয়?
উঃ- ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে।

১৮. বোম্বাইতে কত খ্রিস্টাব্দে সুপ্রিমকোর্ট প্রতিষ্ঠিত হয়?
উঃ- ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে।

১৯. গোটা ভারত জুড়ে মোট কটি সুপ্রিমকোর্ট তৈরি করেছিল ব্রিটিশ কোম্পানি?
উঃ- ৩ টি।

২০. কত খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় সুপ্রিমকোর্ট প্রতিষ্ঠিত হয়?
উঃ- ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে।

২১. ‘কর্নওয়ালিস কোড’ কত খ্রিস্টাব্দে চালু হয়?
উঃ- ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে।

২২. কে বন্দোবস্ত ব্যবস্থা চালু করে ছিলেন?
উঃ- লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক।

২৩. কে ঠগি দস্যুদের দমনে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন?
উঃ- কর্নেল স্লিম্যান।

২৪. ঠগি দস্যু দমনে কে বিশেষ বিভাগ তৈরি করেন?
উঃ- উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক।

২৫. কোন আইনের দ্বারা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উপর ব্রিটেনের পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ সুদৃঢ় হয়েছিল?
উঃ- ১৭৮৪ পিটের ভারত শাসন আইন।

২৬. কত খ্রিস্টাব্দে লর্ড কর্নওয়ালিস জেলাগুলি দেখা-শোনা করার জন্য পুলিশ থানা ব্যবস্থা চালু করেন?
উঃ- ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে।

২৭. প্রতিটি থানায় দারোগাদের নিয়ন্ত্রণ করত কারা?
উঃ- ম্যাজিস্ট্রেটরা।

২৮. ১৮১২ খ্রিস্টাব্দের পরে গ্রামের দেখাশোনার দায়িত্ব কাকে দেওয়া হয়?
উঃ- ক্যালেক্টারকে।

২৯. কত খ্রিস্টাব্দে সিন্ধুপ্রদেশে নতুন ধরনের পুলিশি ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হয়?
উঃ- ১৮৪২ খ্রিস্টাব্দে।

৩০. ভারতে সিভিল সার্ভিস বা অসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা কে চালু করেন?
উঃ- লর্ড কর্নওয়ালিস।

৩১. কে ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন?
উঃ- লর্ড ওয়েলেসলি।

৩২. কত খ্রিস্টাব্দে ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়?
উঃ- ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে।

৩৩. দফতরের কাজের সুবিধার্থে হিন্দু ও মুসলিম আইনগুলিকে ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করানােনেন কে?
উঃ- ওয়ারেন হেস্টিংস।

৩৪. কত খ্রিস্টাব্দে জোনাথন ডানকান এলিজা ইম্পের আইনগুলির অনুবাদ করেন?
উঃ- ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে।

৩৫. কে বেনারসে ‘হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন?
উঃ- জেনাথান ডানকান।

৩৬. হেস্টিংস কত খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন?
উঃ- ১৭৮১  খ্রিস্টাব্দে।

৩৭. ওয়ারেন হেস্টিংস-এর হিন্দু আইন সংকলনের অনুবাদ করেন কে?
উঃ- নাথানিয়েল ব্রাসি হলেট।

৩৮. A Grammar of the Bengal Language' গ্রন্থটি কত খ্রিস্টাব্দে রচিত হয়?
উঃ- ২৭৭৭ খ্রিস্টাব্দে।

৩৯. কোন্ বই ছাপার ক্ষেত্রে প্রথম বিচল বাংলা হরফ ব্যবহার করা হয়েছিল?
উঃ- A GRAMMAR OF THE BENGALI LANGUAGE.

৪০. বাংলা ভাষার প্রথম পূর্ণাঙ্গ বই কোনটি?
উঃ- জেনাথান ডানকান এর অনূদিত আইনের।

৪১. কত খ্রিস্টাব্দে এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়?
উঃ- ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে।

৪২. শ্রীরামপুরের মিশনারিদের মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য কে ছিলেন?
উঃ- উইলিয়ম কেরি।

৪৩. আলেকজান্ডার ডাফ কে ছিলেন?
উঃ-স্কটিশ মিশনারি।

৪৪. কার উদ্যোগে সংস্কৃত কলেজে পঠনপাঠন শুরু হয়?
উঃ- হেম্যান হোরাস উইলসন।

৪৫. কত খ্রিস্টাব্দে কলকাতার সংস্কৃত কলেজে পঠনপাঠন শুরু হয়?
উঃ- ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে।

৪৬. কত খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় হিন্দু কলেজ তৈরি করা হয়?
উঃ- ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে।

৪৭. কত খ্রিস্টাব্দের পর থেকে ইংরেজি ভাষানির্ভর পাশ্চাত্য শিক্ষার দ্রুত বিস্তার ঘটতে থাকে?
উঃ- ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে  ২ ফেব্রুয়ারি।

৪৮. জেনারেল কমিটি অফ পাবলিক ইনস্ট্রাকশন -এর সভাপতি কে ছিলেন?
উঃ- টমাস ব্যাবিংটন মেকলে।

৪৯. কত খ্রিস্টাব্দে ‘মেকলে মিনিটস’ পেশ করা হয়?
উঃ- ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে ১২ ফেব্রুয়ারি।

৫০. চার্লস উড কে ছিলেন?
উঃ- বোর্ড অফ কন্ট্রোল এর সভাপতি।

৫১. খ্রিস্টাব্দে ‘উডের নির্দেশনামা' পেশ করা হয়?
উঃ- ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দের।

৫২. কত খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল?
উঃ- ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের।

৫৩. মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে কাদের উদ্যোগে শিক্ষার প্রসার ঘটেছিল?
উঃ- খ্রিস্টান মিশনারীদের।

৫৪. বেথুনের স্কুল কার উদ্যোগে তৈরি হয়?
উঃ- খ্রিস্টান মিশনারীদের।


৫৫. কর্নওয়ালিশের সংস্কার:
উঃ- ভারতের গভর্নর-জেনারেলরূপে কর্নওয়ালিশ পুলিশি ব্যবস্থা এবং সেনাবাহিনীর বেশকিছু সংস্কার সাধন করেন।
  • পুলিশি ব্যবস্থা: ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে গভর্নর-জেনারেল কর্নওয়ালিশ জেলাগুলির দেখভাল করার জন্য পুলিশ থানা ব্যবস্থার প্রচলন করেন। প্রতিটি থানা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় দারোগার ওপর। দারোগাদের নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব দেওয়া হয় ম্যাজিস্ট্রেটদের হাতে। কিন্তু দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ায় দারোগা পদের বিলুপ্তি ঘটে এবং গ্রামের দেখভালের দায়িত্ব পায় কালেক্টর। ব্রিটিশ কোম্পানির পক্ষ থেকে কর্নওয়ালিশ পুলিশি ব্যবস্থার মাধ্যমে 'আইনের শাসন' প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন।
  • সেনাবাহিনী: তাদের শাসনের সূচনাকাল থেকেই ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নিজেদের সেনাবাহিনী তৈরির উদ্যোগ নেয়। কর্নওয়ালিশ এই উদ্যোগকে আরও এগিয়ে নিয়ে যান। উত্তর ভারতে কৃষকদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা শুরু হয়। কোম্পানি নিজের ভারতীয় সেনা বা সিপাহি তৈরি করে। সিপাহিদের কাজ ঠিক করে দেওয়া হয়। বলা হয়, এলাকা দখল করার পাশাপাশি বিভিন্ন বিদ্রোহের মোকাবিলা করাও সিপাহিদের কাজ।

৫৬. টীকা লেখো: সুপ্রিমকোর্ট:
উঃ- রেগুলেটিং অ্যাক্ট অনুসারে ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় তৈরি হয় ইম্পিরিয়াল কোর্ট বা সুপ্রিমকোর্ট। পরে ১৮০১ খ্রিস্টাব্দে মাদ্রাজে এবং ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে বোম্বাইতে একটি করে সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাকালে কলকাতার সুপ্রিমকোর্টে একজন প্রধান বিচারপতি ও তিনজন বিচারপতি নিয়োগ করা হয়েছিল। পরে সুপ্রিমকোর্টের বিচারকসংখ্যা চার জনের বদলে তিন জন করা হয় (১৭৯৭ খ্রি.)। প্রতিষ্ঠাকালে ঠিক হয়েছিল ভারতে থাকা ব্রিটিশ নাগরিকদেরই বিচার করবে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু পরে আইন করে বলা হয়, রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত কোনো মামলা সুপ্রিমকোর্টের এক্তিয়ারে পড়বে না। এ ছাড়াও কোম্পানির গভর্নর ও গভর্নরের কাউন্সিলদের কাজকর্মে সুপ্রিমকোর্ট হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।

৫৭. উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের সংস্কার:
উঃ- ভারতে গভর্নর-জেনারেলদের মধ্যে উইলিয়ম বেন্টিঙ্ক বেশকিছু সংস্কার সাধন করেছিলেন।
  • মহলওয়ারি বন্দোবস্ত প্রবর্তন: তিনি এলাহাবাদ ও বারাণসী অঞ্চলে মহলওয়ারি বন্দোবস্ত চালু করেছিলেন।
  • ভারতীয় বিচারকপদে নিয়োগ: তিনি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, ডেপুটিকালেক্টর প্রভৃতি পদে আবার ভারতীয়দের নিয়োগ করার প্রথা শুরু করেন।
  • যোগ্যতার ওপর গুরুত্ব: তাঁর প্রবর্তিত এক আইনে বলা হয়, কোম্পানি কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে জাতি, ধর্ম ও বর্ণের মাপকাঠির বদলে কেবল যোগ্যতা বিচারে নিয়োগ করবে।
  • ঠগি দস্যু দমন: কর্নেল স্লিম্যানের নেতৃত্বে এক বিশেষ বিভাগ তৈরি করে ঠগি দস্যুদের দমন করা হয়।

৫৮. সামরিক জাতি বলতে কী বোঝায়?
উঃ- ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মহাবিদ্রোহ বা সিপাহি বিদ্রোহের পর ঔপনিবেশিক সিপাহি বাহিনীকে ঢেলে সাজানো হয়েছিল। ব্রিটিশ শাসকের ধারণা ছিল ভাতের বদলে রুটি খাওয়া ভারতীয়রা শারীরিকভাবে বেশি সক্ষম। এই ধারণা থেকে মহাবিদ্রোহের পর পাঞ্জাবের জাঠ অধিবাসীদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা শুরু হয়। পাশাপাশি সেনাবাহিনীতে পাঠান, রাজপুত ও নেপালি গোর্খাদের সংখ্যা বাড়ানো হয়। উপনিবেশিক শাসকের যুদ্ধের দক্ষ ওইসব সেনাদের সামরিক জাতি বলে হত।

৫৯. ভারতে ব্রিটিশ প্রেসিডেন্সি ব্যবস্থা কীভাবে গড়ে উঠেছিল?
উঃ- ভারতীয় উপমহাদেশে বাণিজ্যের স্বার্থে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কতকগুলি ঘাঁটি তৈরি করেছিল। সেই ঘাঁটিগুলির মধ্যে ছিল মাদ্রাজ, বোম্বাই ও কলকাতা। প্রশাসনিক কার্যকলাপের সুবাদে এই তিনটি বাণিজ্যঘাঁটিকে কেন্দ্র করেই ব্রিটিশ প্রেসিডেন্সি ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল।

৬০. কোন্ কোন্ অঞ্চল মিলে বাংলা প্রেসিডেন্সি গড়ে উঠেছিল?
উঃ- বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা, ত্রিপুরা ও আসাম অঞ্চল মিলে গড়ে উঠেছিল বাংলা প্রেসিডেন্সি। পাঞ্জাব, উত্তর ও মধ্য ভারতের অঞ্চলগুলি এবং গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার অঞ্চলও বাংলা প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত ছিল।

৬১. পিটের ভারত শাসন আইন:
উঃ- ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে প্রবর্তিত রেগুলেটিং অ্যাক্টের ত্রুটিগুলি দূর করা ও ভারতে কোম্পানির শাসনকে আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী উইলিয়াম পিট ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এই আইনটি পাস করেন। ১৭৮৫ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি ওই আইনটি বলবৎ হয়। এই আইনের ফলে ভারতে ব্রিটিশ কোম্পানির কার্যকলাপের ওপর ব্রিটেনের পার্লামেন্টের নজরদারি সুনিশ্চিত হয়।

৬২. ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রেসিডেন্সি ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল কেন?
উঃ- ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রেসিডেন্সি ব্যবস্থার দ্বারা ভারতীয় উপমহাদেশে বাণিজ্যিক ও প্রশাসনিক কার্যকলাপের প্রসার ঘটাতে চেয়েছিল। তা ছাড়া প্রেসিডেন্সির কাউন্সিলগুলি লন্ডনে ব্রিটিশ কোম্পানির পরিচালক গোষ্ঠীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রেখে চলত।

৬৩. রেগুলেটিং অ্যাক্ট কী?
উঃ- ভারতের ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া বাণিজ্যের ওপর ব্রিটেনের পার্লামেন্টের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ স্থাপনের লক্ষ্যে প্রবর্তিত হয় রেগুলেটিং অ্যাক্ট (১৭৭৩ খ্রি.)। এই আইন অনুসারে,
  • মাদ্রাজ, বোম্বাই ও বাংলা প্রেসিডেন্সিগুলির স্বতন্ত্র কার্যকলাপের ওপর হস্তক্ষেপ করা হয়।
  • গভর্নর জেনারেল বলে নতুন একটি পদ তৈরি করা হয়।
  • পাঁচ বছরের জন্য বাংলার গভর্নরই হবেন গভর্নর জেনারেল এবং তাঁর অধীনেই মাদ্রাজ ও বোম্বাইয়ের বাণিজ্যিক ঘাঁটিগুলির গভর্নরেরা থাকবেন।

৬৪. উইলিয়াম কেরি ও ব্যাপটিস্ট মিশন (টীকা):
উঃ- শ্রীরামপুরে ব্যাপটিস্ট মিশন স্থাপিত হয় (১৮০০ খ্রি.)। মিশনারিরা ব্রিটিশ কোম্পানির তরফে ভারতে শিক্ষাবিস্তারের চেষ্টা শুরু করেন। নিজেদের মুদ্রণ যন্ত্রে তারা বাংলা ভাষায় বিভিন্ন লেখা ছাপাতে শুরু করেন। শ্রীরামপুরে মিশনারিদের মধ্যে উইলিয়াম কেরি ভারতীয় মহাকাব্যগুলি ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করেন। তিনি বাইবেলের একটি অংশকে বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় অনুবাদের পাশাপাশি হালেদের লেখা বাংলা ব্যাকরণ বইয়ের সম্পাদনা করেন।

৬৫. মেকলে মিনিটস কি?
উঃ- বেন্টিঙ্কের শিক্ষাসচিব মেকলের প্রতিবেদন ছিল ব্রিটিশের নতুন শিক্ষাব্যবস্থার মূল পথপ্রদর্শক। জেনারেল কমিটি অব পাবলিক ইন্সট্রাকশনের সভাপতি টমাস ব্যাবিংটন মেকলে ভারতবর্ষে শিক্ষার প্রসঙ্গে একটি প্রতিবেদন বা মিনিটস পেশ করেন।
মেকলের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক প্রশাসনের প্রধান উদ্দেশ্য হল ইংরেজি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি তৈরি করা। মেকলে এই প্রতিবেদনে আশা প্রকাশ করেন যে শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা জন্মগতভাবে ভারতীয় হলেও, রুচি, আদর্শ ও নৈতিক আচরণের দিক থেকে ব্রিটিশ হয়ে উঠবে। মেকলে এই প্রতিবেদনে জানায়, ভারতীয় ভাষায় শিক্ষার চর্চাকারী প্রতিষ্ঠানগুলিকে সরকারি অনুদান দেওয়া হবে না।

৬৬. উডের প্রতিবেদন বা উডের ডেসপ্যাচ:
উঃ- পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের লক্ষে উডের প্রতিবেদন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে বোর্ড অব কন্ট্রোলের সভাপতি চার্লস উড এই প্রতিবেদন পেশ করেন।
উডের প্রতিবেদনে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিকস্তর পর্যন্ত এক শিক্ষাকাঠামো গড়ে তোলার পরামর্শ দেওয়া হয়। পাশাপাশি এই প্রতিবেদনে পাশ্চাত্য শিক্ষাবিস্তারের মাধ্যম হিসেবে ইংরেজি ও ভারতীয় দু-ধরনের ভাষাচর্চার কথা বলা হয়েছিল।
এই প্রতিবেদন অনুযায়ী-
  • কলকাতা, মাদ্রাজ, বোম্বাই- এই তিন প্রেসিডেন্সিতে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়।
  • উচ্চবিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ানো হয়।
  • দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অনেকগুলি প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা হয়।

৬৭. প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী বিতর্ক বলতে কী বোঝ?
উঃ- ঊনবিংশ শতকে ভারতে শিক্ষাদান রীতিকে কেন্দ্র করে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যবাদীদের মধ্যে একটি বিতর্ক দেখা দেয়।
  • প্রাচ্যবাদী মত: কোলব্রুক, উইলসন প্রমুখ প্রাচ্যবাদী (ওরিয়েন্টালিস্ট)- রা বলেন যে, প্রাচ্যরীতি মেনেই শিক্ষাদান করা উচিত।
  • পাশ্চাত্যবাদী মত: আলেকজান্ডার ডাফ, স্যান্ডার্স প্রমুখ পাশ্চাত্যবাদী (অ্যাংলিসিস্ট) রা এর বিরোধিতা করেন ও বলেন যে, পাশ্চাত্যরীতি অনুসরণ করেই ভারতে শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন। ফলে শিক্ষাদান রীতি নিয়ে এক বিতর্কের সৃষ্টি হয়, যা প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্যবাদী বিতর্ক নামে পরিচিত।

৬৮. ইজারাদারি ব্যবস্থা বলতে কী বোঝ?
উঃ- ওয়ারেন হেস্টিংসের আমলে নিলামে সবথেকে বেশি খাজনার ডাক দেওয়া ব্যক্তির সঙ্গে কোম্পানি এক বন্দোবস্ত করে। পাঁচ বছরের জন্য ওই ব্যক্তিকে জমি দেওয়ার বন্দোবস্ত ইজারাদারি বন্দোবস্ত নামে পরিচিত। ইজারার মেয়াদ পাঁচ বছর হওয়ায় এই বন্দোবস্তের অপর নাম পাঁচসালা বন্দোবস্ত।

৬৯. ইজারাদারি ব্যবস্থার ত্রুটি সম্পর্কে লেখো।
উঃ- বহু ইজারাদার গ্রামসমাজের বাইরের লোক হওয়ায় ঠিকমতো রাজস্ব নির্ধারণ করতে পারেননি। ফলে বহুক্ষেত্রেই ধার্য রাজস্ব বাস্তব রাজস্বের থেকে বেশি হয়ে গিয়েছিল। তাই দেখা যায়, ইজারাদারদের অনেকেই তাদের দেয় রাজস্ব শোধ করতে পারত না।

৭০. টীকা লেখো: মুদ্রিত বাংলা বই:
উঃ- ওয়ারেন হেস্টিংসের পৃষ্ঠপোষকতায় এক হিন্দু আইন সংকলন করা হয়। এই সংকলনের ইংরেজি অনুবাদ (সংক্ষিপ্ত নাম 'A code of Gen- too law')-টির কাজ করেন ন্যাথানিয়েল ব্রাসি হালেদ। পাশাপাশি হালেদ 'A Grammar of the Bengal Language' নামে এক বাংলা ব্যাকরণ বই লেখেন। ব্যাকরণ বইটি হুগলির জন অ্যান্ড্রুজের ছাপাখানায় প্রথম সহজ বাংলা হরফে ছাপা হয়। জোনাথান ডানকান বাংলা ভাষায় প্রথম একটি পূর্ণাঙ্গ বই অনুবাদ করেন।

৭১. ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে খ্রিস্টান মিশনারিদের ভূমিকা উল্লেখ করো। অথবা, ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে খ্রিস্টান মিশনারিদের অবদান লেখো।
উঃ- খ্রিস্টান মিশনারিরা ব্রিটিশ কোম্পানির তরফে ভারতে শিক্ষাবিস্তারের বিভিন্ন উদ্যোগে শামিল হন।

  • শ্রীরামপুর মিশনারি: উইলিয়াম কেরি ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুরে ব্যাপটিস্ট মিশন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি মার্শম্যান এবং উইলিয়াম ওয়ার্ড- এর সহায়তায় একটি ইংরেজি বিদ্যালয় ও ছাপাখানা চালানোর কাজে ব্রতী হন। শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশনারি সোসাইটিগুলির উদ্যোগে ভারতে ছাপাখানা ও বহু বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
  • স্কটিশ মিশনারি: আলেকজান্ডার ডাফ এদেশে ইংরেজি শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত জেনারেল অ্যাসেম্বলি ইন্সটিটিউশন পরবর্তীকালে স্কটিশ চার্চ কলেজ নামে পরিচিত হয়েছে।

অনুশীলনীর প্রশ্ন ও উত্তর:
১. বেমানান শব্দটি খুঁজে বার করো:
(ক) বোম্বাই, মাদ্রাজ, কলকাতা, বাংলা।
উঃ- বাংলা।
(কারণ বোম্বাই মাদ্রাজ কলকাতা এগুলি ব্রিটিশ সরকারি প্রেসিডেন্সি ব্যবস্থা মধ্যে পড়ে)।

(খ) ক্লাইভ, হেস্টিসে, দুপ্নে, কর্নওয়ালিশ।
উঃ- দুপ্নে।
(কারণ ক্লাইভ, হেস্টিসে, কর্নওয়ালিশ। এরা ছিল বিটির গভর্নর)।

(গ) বাংলা, বিহার, সিন্ধুপ্রদেশ, উড়িষ্যা।
উঃ- সিন্ধুপ্রদেশ
(কারণ বাংলা বিহার উড়িষ্যা দেওয়ানি লাভ করেছিল ব্রিটিশ সরকার)।

(ঘ) ডেভিড হেয়ার, উইলিয়াম কেরি, জোনাঘন ডানকান, উইলিয়ম পিট।
উঃ- উইলিয়ম পিট।
(কারণ,ডেভিড হেয়ার, উইলিয়াম কেরি, জোনাঘন ডানকান, এরা ভারতের শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা গ্রহণ করেছিল)।

২. নীচের বিবৃতিগুলির কোন্‌টি ঠিক কোনটি ভুল বেছে নাও?
(ক) বাংলা প্রেসিডেন্সিতে সেন্ট জর্জ দূর্গ প্রেসিডেন্সি বলা হতো।
উঃ- ভুল।
(ঠিক উত্তরটি হবে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে সেন্ট জর্জ দূর্গ প্রেসিডেন্সি বলা হতো।)

(খ) বেনারসে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জোনাথন ডানকান।
উঃ- ঠিক।

(গ) উইলিয়াম কেরি ছিলেন শ্রীরামপুরের মিশনারি সোসাইটির সদস্য।
উঃ- ঠিক।

(ঘ) দশ বছরের ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থার জন্য কোম্পানি ইজারাদারি ব্যবস্থা চালু করেছিল। উঃ- ভুল।
(ঠিক উত্তর পাঁচ বছরের ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থার জন্য কোম্পানি ইজারাদারি ব্যবস্থা চালু করেছিল)

৩. অতি সংক্ষেপে উত্তর দাও (৩০-৪০টি শব্দ):
(ক) ব্রিটিশ প্রেসিডেন্সি ব্যবস্থা কাকে বলে?
উঃ- ভারতীয় উপমহাদেশে বাণিজ্যের স্বার্থে ব্রিটিশ কোম্পানি কলকাতা, মাদ্রাজ, বোম্বাই প্রভৃতি স্থানে ঘাঁটি তৈরি করে। এই তিনটি ঘাঁটিকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ কোম্পানি বাণিজ্যিক কার্যকলাপ চালাত। পরে ঐগুলি প্রশাসনিক কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল। একে প্রেসিডেন্সি ব্যবস্থা বলা হয়।

(খ) কোম্পানি পরিচালিত আইন ব্যবস্থাকে সংহত করার ক্ষেত্রে লর্ড কর্নওয়ালিশ কী ভূমিকা নিয়েছিলেন?
উঃ- ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিশ আইনগুলিকে সংহত করে কোর্ড বা বিধিবদ্ধ আইন চালু করেন। 
দেওয়ানি সঙ্ক্রান্ত বিচার ও রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব আলাদা হয়ে যায়।
জেলা থেকে সদর পর্যন্ত আদালত ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়।
নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করার অধিকার স্বীকার করা হয়।

(গ) কোম্পানির সিপাহী বাহিনী বলতে কী বোঝো?
উঃ- কোম্পানির সিপাহী বাহিনী বলতে বোঝায় ভারতবাসী দের নিয়ে গঠিত সেনাবাহিনী। যেমন উত্তর ভারতে কৃষকদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল এই সেনাবাহিনী বা সিপাহী বাহিনী। কোম্পানির হয়ে এলাকা দখল করার কাজ করতে হতো এছাড়াও কোম্পানির ঘোরতর পরিস্থিতি সৃষ্টি হইলে তা মোকাবিলা করতে হতো এই সিপাহীদের। এদেরকে সাধারণ মানুষ থেকে আলাদা রাখা হতো।

(ঘ) কোম্পানি শাসনে জরিপের ক্ষেত্রে জেমস রেনেল-এর কী ভূমিকা ছিল?
উঃ- ১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি ভারতের সার্ভেয়ার জেনারেল বা জরিপ বিভাগের প্রধান হিসাবে  জেমস রেনেলকে নিয়োগ করে। বাংলায় নদীপথগুলি জরিপ করে রেনেল মোট ১৬টি মানচিত্র তৈরি করেছিলেন। সেই প্রথম রেনেলের তত্ত্বাবধানে বাংলার নদী গতিপথের মানচিত্র বানানো হয়। এর ফলস্বরূপ দেওয়ানি লাভের পর রাজস্ব আদায়ের জন্য জমি জরিপের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়।

৪. নিজের ভাষায় লেখো (১২০-১৬০ টি শব্দ):
(ক) ওয়ারেন হেস্টিংস ও লর্ড কর্নওয়ালিশের বিচারব্যবস্থার সংস্কারের তুলনামূলক আলোচনা করো। ওই সংস্কারগুলির প্রভাব ভারতীয়দের উপর কীভাবে পড়েছিল?
উঃ- ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ কোম্পানি নতুন বিচারব্যবস্থা চালু করে। ১৭৭৩ থেকে ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে দেওয়ানি বিচারব্যবস্থার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে।  একদিকে হেস্টিংস ১১ জন হিন্দু পণ্ডিতদের দ্বারা হিন্দু আইনগুলির সংকলন করিয়ে সেটির ইংরেজি অনুবাদ করেন।মুসলিম আইনগুলিরও সংকলন বানানো হয়। এর ফলে দেশীয় আইনের ব্যাখ্যার জন্য ইউরোপীয় বিচারকদের ভারতীয় সহকারীদের উপর নির্ভর করতে হতো না। এতে বিচারব্যবস্থা কেন্দ্রীভূত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়েছিল। অপরদিকে, লর্ড কর্নওয়ালিশ আইনগুলিকে সংহত করে কোড বা বিধিবদ্ধ আইন চালু করেন। দেওয়ানি সংক্রান্ত বিচারব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়। দেওয়ানি বিচার ও রাজস্ব আদায়ের দায়িত্বকে আলাদা করা হয়। নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আবেদনের অধিকার স্বীকার করে নেওয়া হয়।  এই ব্যবস্থা ঔপনিবেশিক শাসনের প্রধান স্তম্ভ হয়ে উঠেছিল।

(খ) ভারতে কোম্পানি শাসনের বিস্তার ও সেনাবাহিনীর বৃদ্ধির মধ্যে কী সরাসরি সম্পর্ক ছিল বলে মনে হয়? তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
উঃ। হ্যাঁ, সরাসরি সম্পর্ক ছিল বলে মনে হয়।কারণ প্রাথমিকভাবে ঔপনিবেশিক শাসনের যেকোনো বিরোধিতার মোকাবিলা করত পুলিশবাহিনী। তবে পরিস্থিতি ঘোরালো হয়ে উঠলে প্রয়োজন পড়ত সেনাবাহিনীর। ফলে
কোম্পানির হয়ে এলাকা দখলের কাজ  করত। তার ফলেকোম্পানি এলাকা বৃদ্ধি ওরা সহজ হয়ে উঠত। সেনাবাহিনীতে সিপাহি নিয়োগের মাধ্যমে কোম্পানির রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ছড়িয়ে পড়েছিল।

(গ) ব্রিটিশ কোম্পানির প্রশাসন ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্রের ভূমিকা কী ছিল? কীভাবে আমলারা একটি সংকীর্ণ গোষ্ঠী হিসেবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল?
উঃ- অসামরিক শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রে ঔপনিবেশিক শাসনের প্রধান হাতিয়ার ছিল আমলাতন্ত্র। তবে নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমলাদের কোনও স্বাধীনতা ছিল না। ইংরেজ সরকারের নীতিগুলি রূপায়ণ করাই ছিল তাদের কাজ।

(ঘ) কোম্পানি-শাসনের শিক্ষানীতির ক্ষেত্রে বাংলার সঙ্গে বোম্বাইয়ের কোনো তফাৎ ছিল কি? কোম্পানির শিক্ষানীতির প্রভাব ভারতীয় সমাজে কীভাবে পড়েছিল বলে তোমার মনে হয়?
উঃ- কলকাতা ও বোম্বাই-এর শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে কিছুটা ফারাক ছিল। বাংলায় প্রথমে দেশীয় ভাষায় শিক্ষাদান পদ্ধতি চালু হলেও পরে শিক্ষার মাধ্যম হয় ইংরেজি। বোম্বাই প্রেসিডেন্সিতে গোড়া থেকেই ভারতীয় ভাষার মাধ্যমে পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় জোর পড়েছিল।  উচ্চশিক্ষার মাধ্যম ইংরাজি হওয়ায় তা গণমুখী হয়নি। পাশাপাশি উপযুক্ত প্রশিক্ষণ বা হাতেকলমে শিক্ষার ব্যবস্থা না থাকায় তা পৃথিগত চর্চার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে এবং প্রচলিত ভারতীয় শিক্ষাচর্চা ক্রমশ অবলুপ্ত হতে থাকে।

(ঙ) কোম্পানি-শাসনের সঙ্গে জমি জরিপের সম্পর্ক কী ছিল? ইজারাদারি বন্দোবস্ত চালু করা ও তা তুলে দেওয়ার পিছনে কী কী কারণ ছিল?
উঃ- ভারতে ঔপনিবেশিক প্রশাসন রাজস্ব ব্যবস্থা বিষয়ে নানারকম পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে ছিল। তার মধ্যে প্রধান ছিল জমি জরিপ করা ও তার ভিত্তিতে রাজস্ব নির্ধারণ করা। ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে বক্সারের যুদ্ধের পর ও দেওয়ানির অধিকার পাওয়ার ফলে বাংলায় জমি জরিপ করে রাজস্ব নির্ণয় বিষয়ে কোম্পানি তৎপর হয়ে ওঠে।
পাঁচ বছরের জন্য নিলাম ডেকে জমিদারি কোনও ব্যক্তির হাতে দেওয়া হয়। তাকে বলে ইজারাদারি ব্যবস্থা। কিন্তু দ্রুতই এই ব্যবস্থায় বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায়, এই ব্যবস্থা তুলে দেওয়া হয়। কারণ-
  • অনেক ইজারাদার গ্রাম সমাজের বাইরের লোক হওয়ায় ঠিক মতো রাজস্ব নির্ণয় করতে পারেনি। করের পরিমাণ অত্যন্ত বেশি হওয়ায় সবাই রাজস্ব দিতেই পারেনি।
  • অনেক ক্ষেত্রেই ধার্য করের অপেক্ষা আদায় বেশি হয়ে গিয়েছে। সেজন্য অনেক ইজারাদার রাজস্ব শোধ করতে ব্যর্থ হয়। ক্রমে ব্রিটিশ কোম্পানি এসব বন্দোবস্ত তুলে দেন।
এই পোস্টের pdf download করতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন ⤵️

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন for "ঔপনিবেশিক কর্তৃক প্রতিষ্ঠা: অষ্টম শ্রেণীর তৃতীয় অধ্যায় (Free Pdf Download). "