ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের ধারা: ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাস (চতুর্থ অধ্যায়)


১. ইতিহাসের গোয়েন্দাদের কাজ কী?

উঃ- কোথায়, কতটা, কীভাবে ইতিহাস লুকিয়ে আছে সেটা খোঁজাই ইতিহাসের গোয়েন্দাদের কাজ।
২. কোন্ শব্দের সঙ্গে Roaming শব্দের মিল পাওয়া যায়?
উঃ-  রাম শব্দের সঙ্গে Roaming শব্দের মিল পাওয়া যায়।
৩. আদি বৈদিক যুগের ইতিহাস জানার প্রধান উপাদান কোনটি?
উঃ- আদি বৈদিক যুগের ইতিহাস জানার প্রধান উপাদান ঋগ্বেদ।
৪. ঋগ্বেদ ও জেন্দ-আবেস্তায় কোন্ ভাষার প্রভাব লক্ষ করা যায়?
উঃ- ঋগ্বেদ ও জেন্দ-আবেস্তায় ইন্দো-ইরানীয় ভাষার প্রভাব লক্ষ করা যায়।
৫. ভারতে আগত প্রথম বিদেশি কারা?
উঃ- ভারতে আগত প্রথম বিদেশি ছিল ইন্দো-আর্য ভাষাগোষ্ঠীর লোকেরা।
৬. ঋগ্বেদে কোন্ ভাষার প্রভাব লক্ষ করা যায়?
উঃ- ঋগ্বেদে ইন্দো-ইরানীয় ভাষার প্রভাব লক্ষ করা যায়।
৭. ইন্দো-আর্য ভাষাগোষ্ঠী কাদের বলে?
উঃ- ইন্দো-ইরানীয় ভাষাগোষ্ঠীর বিবাদের কারণে এই গোষ্ঠীর একটি শাখা উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত হয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে পৌঁছোয়, যাদের ইন্দো-আর্য ভাষাগোষ্ঠী বলা হয়।
৮. বেদ কোন্ শব্দ থেকে এসেছে?
উঃ- বেদ 'বিদ' শব্দ থেকে এসেছে।
৯. বেদগুলি ক-টি ভাগে বিভক্ত?
উঃ- বেদগুলি চারটি ভাগে বিভক্ত।
১০. সংহিতা কত ভাগে বিভক্ত ও কী কী?
উঃ- সংহিতা চার ভাগে বিভক্ত, যথা- ঋক্, সাম, যজুঃ ও অথর্ব।
১১. সবচেয়ে প্রাচীন বৈদিক সাহিত্য কোনটি?
উঃ- সবচেয়ে প্রাচীন বৈদিক সাহিত্য হল ঋগ্বেদ।
১২. পৃথিবীর প্রাচীনতম গ্রন্থ কী?
উঃ- পৃথিবীর প্রাচীনতম গ্রন্থ হল ঋগ্বেদ।
১৩. সংহিতা বলতে কী বোঝ?
উঃ- বৈদিক সাহিত্যে ছন্দে বাঁধা কবিতাগুলির নাম হল সংহিতা, বা বলা যায় ঋক্, সাম, যজুঃ ও অথর্ব এই চারটি হল সংহিতা।
১৪. আরণ্যক সাহিত্য থেকে কী জানা যায়?
উঃ-  আরণ্যক সাহিত্য থেকে যজ্ঞের ব্যাখ্যা ও নানা চিন্তাভাবনা জানা যায়।

এই পোস্টের pdf পেতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন ⤵️ 

১৫. উপনিষদের বিষয়বস্তু কী?
উঃ- উপনিষদের বিষয়বস্তু ছিল বেদের নানা ভাষাতত্ত্বের বিভিন্ন ব্যাখ্যা ও চিন্তাভাবনা।
১৬. বেদাঙ্গ সংখ্যায় কয়টি ছিল?
উঃ- বেদাঙ্গ সংখ্যায় ছয়টি।
১৭. কোন্ সময়ে বৈদিক সাহিত্য রচিত হয়েছিল?
উঃ- আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দ থেকে ৬০০ অব্দের মধ্যে বৈদিক সাহিত্য রচিত হয়েছিল।
১৮. ঋগ্বেদে কোন্ পর্বতের উল্লেখ নেই?
উঃ-  ঋগ্বেদে বিন্ধ্য পর্বতের উল্লেখ নেই।
১৯. ঋগ্বেদে কোন্ শৃঙ্গের উল্লেখ আছে?
উঃ- ঋগ্বেদে কাশ্মীরের মুজবন্ত শৃঙ্গের উল্লেখ আছে।
২০. যজুর্বেদে কী আলোচনা করা হয়েছে?
উঃ- যজুর্বেদে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানের দরকারি মন্ত্রগুলি পদ্যে-গদ্যে আলোচনা করা হয়েছে।
২১. ঋগ্বেদের আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ নদীর নামটি কী?
উঃ- ঋগ্বেদের আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ নদীর নামটি হল সিন্ধু।
২২. আর্যরা ভারতের কোথায় প্রথম বসতি স্থাপন করেন?
উঃ- আর্যরা ভারতের সপ্তসিন্ধু অঞ্চলে প্রথম বসতি স্থাপন করেন।
২৩. আর্যদের আদি বাসভূমি কোথায় ছিল?
উঃ- আর্যদের আদি বাসভূমি ছিল সপ্তসিন্ধু অঞ্চল।
২৪. বৈদিক বসতি কোথা থেকে কোথায় সরে গিয়েছিল?
উঃ- বৈদিক বসতি পাঞ্জাব থেকে পূর্বদিকে হরিয়ানাতে সরে গিয়েছিল।
২৫. বৈদিক সাহিত্যে কোন্ কোন্ ধাতুর ব্যবহার সম্পর্কে জানা যায়?
উঃ- বৈদিক সাহিত্যে প্রথম দিকে তামা ও ব্রোঞ্জ এবং শেষের দিকে লোহার ব্যবহার সম্পর্কে জানা যায়।
২৬. প্রাচীন উপমহাদেশে চিত্রিত ধূসর মাটির পাত্রের ব্যবহার কোন্ সময়ে দেখতে পাওয়া গেছে?
উঃ- প্রাচীন উপমহাদেশে চিত্রিত ধূসর মাটির পাত্রের ব্যবহার খ্রিস্টপূর্ব ১৬০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ অব্দ সময়ে দেখতে পাওয়া গেছে।
২৭. ভারতের কোথায় কোথায় খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ অব্দের পরের সময়ের মাটির বাসন ও লোহার ব্যবহারের প্রমাণ মেলে?
উঃ- ভারতের অত্রপ্তিখেরা, হস্তিনাপুর, অহিচ্ছত্র, নোহ প্রভৃতি জায়গাগুলিতে খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ অব্দের পরের সময়ের মাটির বাসন ও লোহার ব্যবহারের প্রমাণ মেলে।
২৮. দশ রাজার যুদ্ধে ভরত গোষ্ঠীর রাজা কে ছিলেন?
উঃ- দশ রাজার যুদ্ধে ভরত গোষ্ঠীর রাজা ছিলেন সুদাস।
২৯. ঋগ্বেদে জনগণ, বিশ প্রভৃতি শব্দের মাধ্যমে কী বোঝানো হত?
উঃ- ঋগ্বেদে জনগণ, বিশ প্রভৃতি শব্দ দিয়ে গ্রামের থেকে বড়ো একটি জনগোষ্ঠীকে বোঝানো হত।
৩০. ঋগ্বেদে যে প্রতিষ্ঠানের কথা রয়েছে তার নাম কী? অথবা, বিদথ কী?
উঃ- ঋগ্বেদে যে প্রতিষ্ঠানের কথা রয়েছে তার নাম বিদথ।
৩১. ঋগ্বেদে ভূপতি যদি জমির মালিক হন, তাহলে নরপতি কাকে বলা হয়?
উঃ- ঋগ্বেদে ভূপতি যদি জমির মালিক হন, তাহলে নরপতি বলা হয় মানুষের রক্ষাকারীকে।
৩২. বৈদিক যুগে পৃথিবীর রাজা কে ছিলেন?
উঃ- বৈদিক যুগে পৃথিবীর রাজা ছিলেন মহীপতি।
৩৩. দেবতাদের মধ্যে সেরা বীর কে ছিলেন?
উঃ- দেবতাদের মধ্যে সেরা বীর ছিলেন ইন্দ্র।
৩৪. রত্নিন কাদের বলা হত?
উঃ- ঋগ্বেদিক যুগে শাসনের কাজে রাজাকে যাঁরা সাহায্য করতেন তাদের রত্নিন বলা হত।
এই পোস্টের pdf পেতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন ⤵️ 

৩৫. 'বলি' কী?
উঃ- বৈদিক যুগে প্রজারা নিরাপদে থাকার জন্য স্বেচ্ছায় রাজাকে এক ধরনের কর দিত, ঋগ্বেদে এই কর বলি নামে পরিচিত।
৩৬. বৈদিক সমাজে প্রধান খাদ্যশস্য কী কী ছিল?
উঃ- বৈদিক সমাজে প্রধান খাদ্যশস্য ছিল যব, গম ও ধান।
৩৭. কখন থেকে আর্যরা লোহার ব্যবহার শুরু করে বলে মনে করা হয়?
উঃ- আদি বৈদিক যুগে না হলেও পরবর্তী বৈদিক যুগ থেকে আর্যরা লোহার ব্যবহার শুরু করে বলে মনে করা হয়।
৩৮. বৈদিক যুগে জিনিসপত্র বিনিময় করার জন্য কোন্ মুদ্রার ব্যবহার করা হয়?
উঃ- বৈদিক যুগে জিনিসপত্র বিনিময় করার জন্য নিষ্ক মুদ্রার ব্যবহার করা হয়।
৩৯. পরবর্তী বৈদিক যুগের সমাজের চারটি বর্ণের নাম লেখো।
উঃ- পরবর্তী বৈদিক যুগের সমাজের চারটি বর্ণের নাম হল ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র।
৪০. ঋগ্‌বৈদিক যুগে সমাজে কারা বেশি সুবিধা ভোগ করত?
উঃ- ঋগ্বেদিক যুগে সমাজে ব্রাহ্মণরা বেশি সুবিধা ভোগ করত।
৪১. সত্যকামের মায়ের নাম কী ছিল?
উঃ- সত্যকামের মায়ের নাম ছিল জবালা।
৪২. পরবর্তী বৈদিক সমাজে গোত্র বলতে কী বোঝানো হত?
উঃ- পরবর্তী বৈদিক সমাজে গোত্র বলতে গোষ্ঠীর গবাদিপুশর রাখার জায়গাকে বোঝানো হত।
৪৩. আদি বৈদিক যুগের কোন্ প্রতিষ্ঠানে নারীরা অংশগ্রহণ করতে পারতেন?
উঃ- আদি বৈদিক যুগের 'সমিতি' নামক প্রতিষ্ঠানে নারীরা অংশগ্রহণ করতে পারতেন।
৪৪. যজ্ঞে নারীরা অংশ নিতে পারতেন কোন্ সমাজে?
উঃ- যজ্ঞে নারীরা অংশ নিতে পারতেন ঋগ্বেদিক সমাজে।
৪৫. বৈদিক সমাজে কোন্ খেলা খুবই জনপ্রিয় ছিল?
উঃ- বৈদিক সমাজে পাশা খেলা খুবই জনপ্রিয় ছিল।
৪৬. বৈদিক সমাজে প্রচলিত কয়েকটি খেলার নাম লেখো।
উঃ-  বৈদিক সমাজে প্রচলিত কয়েকটি খেলার নাম হল পাশা খেলা, রথ ও ঘোড়দৌড়।
৪৭. সভা ও সমিতিতে কোন্ খেলা হত?
উঃ- সভা ও সমিতিতে পাশা খেলা হত।
৪৮. বৈদিক যুগে জীবনযাপনের পর্যায়গুলিকে একসঙ্গে কী বলা হত?
উঃ- বৈদিক যুগে জীবনযাপনের পর্যায়গুলিকে একসঙ্গে চতুরাশ্রম বলা হত।
৪৯. ব্রহ্মচর্যাশ্রম কাকে বলে?
উঃ- ছাত্রাবস্থায় গুরুগৃহ থেকে শিক্ষালাভ করাকে বলা হত ব্রহ্মচর্যাশ্রম।
৫০. গার্হস্থ্যাশ্রম কাকে বলে?
উঃ- শিক্ষালাভের পর বিয়ে করে সংসার জীবনযাপনকে বলা হত গার্হস্থ্যাশ্রম।
৫১. চতুরাশ্রম-এর তৃতীয় আশ্রম কোনটি?
উঃ- চতুরাশ্রম-এর তৃতীয় আশ্রম হল বানপ্রস্থাশ্রম।
৫২. ঋগ্বেদের দেবতাদের মধ্যে কারা উল্লেখযোগ্য ছিলেন?
উঃ- ঋগ্বেদের দেবতাদের মধ্যে ইন্দ্র, বরুণ, অগ্নি, সূর্য, মিত্র, অশ্বিনীদ্বয়, সোম প্রমুখ উল্লেখযোগ্য ছিলেন।
৫৩. ঋগ্বেদের দেবীদের মধ্যে কারা উল্লেখযোগ্য ছিলেন?
উঃ-  ঋগ্বেদের দেবীদের মধ্যে উষা, সরস্বতী, অদিতি, পৃথিবী প্রমুখ উল্লেখযোগ্য ছিলেন।
৫৪. পরবর্তী বৈদিক যুগে কোন্ দুই দেবতা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন?
উঃ- পরবর্তী বৈদিক যুগে রুদ্র ও বিষু এই দুই দেবতা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন।
৫৫. ঋগ্বেদিক যুগে যুদ্ধের ও বৃষ্টির দেবতা কে?
উঃ- ঋগ্বেদিক যুগে যুদ্ধের ও বৃষ্টির দেবতা ইন্দ্র।
৫৬. বৈদিক শিক্ষাব্যবস্থায় কোন্ শিক্ষাটি তোমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
উঃ- বৈদিক শিক্ষাব্যবস্থায় মুখস্থ করার ক্ষেত্রে সঠিক উচ্চারণের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হত, যা আমার মতে গুরুত্বপূর্ণ।
৫৭. মহর্ষি আয়োদধৌম্যের তিনজন ছাত্রের নাম লেখো।
উঃ- মহর্ষি আয়োদধৌম্যের তিনজন ছাত্রের নাম হল বেদ, উপমন্যু ও আরুণি।
৫৮. বৈদিক যুগে কোন্ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষাদান শুরু হত?
উঃ- বৈদিক যুগে বেদ পাঠ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষাদান শুরু হত।
৫৯. আর্যবালক গুরুগৃহে সাধারণত কত বছর শিক্ষাগ্রহণ করত?
উঃ- আর্য বালক গুরুগৃহে সাধারণত বারো বছর শিক্ষাগ্রহণ করত।
৬০. বৈদিক যুগের শিক্ষাব্যবস্থায় বারো বছরের পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ছাত্রদের কী বলে ঘোষণা করা হত?
উঃ- বৈদিক যুগের শিক্ষাব্যবস্থায় বারো বছরের পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ছাত্রদের স্নাতক বলে ঘোষণা করা হত।
৬১. সমাবর্তনে ছাত্রদের কী বলা হত?
উঃ- সমাবর্তনে ছাত্রদের স্নাতক বলা হত।
৬২. বৈদিক যুগের গুরুদক্ষিণা কী ছিল?
উঃ- বৈদিক যুগের গুরুদক্ষিণা ছিল গোরু দান বা গো-দান।
৬৩. ভিলদের রাজা কে ছিলেন?
উঃ- ভিলদের রাজা ছিলেন হিরণ্যধনু।
৬৪. একলব্য কে?
উঃ- একলব্য ছিলেন ভিলরাজা হিরণ্যধনুর পুত্র তথা অস্ত্রশিক্ষায় দ্রোণাচার্যের আদর্শে অনুপ্রাণিত এক তিরন্দাজ।
৬৫. একলব্যের বাবার নাম কী?
উঃ- একলব্যের বাবার নাম হিরণ্যধনু।
৬৬. সমাবর্তন অনুষ্ঠান কী?
উঃ- বৈদিক যুগে বারো বছরের পড়াশোনা শেষ হলে যে অনুষ্ঠানে ছাত্রদের স্নাতক বলে ঘোষণা করা হত, সেই অনুষ্ঠানকে বলা হত সমাবর্তন।
৬৭. একলব্যের উল্লেখ কোন্ মহাকাব্যে পাওয়া যায়?
উঃ- একলব্যের উল্লেখ মহাভারতে পাওয়া যায়।
৬৮. ভারতীয় উপমহাদেশের কোন্ স্থানগুলিতে বৈদিক সভ্যতা ছিল না?
উঃ- ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্ব, উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ অংশে বৈদিক সভ্যতা ছিল না।
৭০. ভারতের কোথায় বৈদিক গ্রামীণ কৃষিসমাজের খোঁজ পাওয়া গেছে?
উঃ- ভারতের মহারাষ্ট্রের ইনামগাঁওতে বৈদিক গ্রামীণ কৃষিসমাজের খোঁজ পাওয়া গেছে।
৭১. ভারতের একটি বিখ্যাত মেগালিথ কেন্দ্রের নাম লেখো।
উঃ- রাজস্থানের ভরতপুর হল ভারতের একটি বিখ্যাত মেগালিথ কেন্দ্র।
এই পোস্টের pdf পেতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন ⤵️ 

৭২. ভারতের আজও কোথায় মেগালিথ ব্যবস্থা রয়েছে?
উঃ- ছোটোনাগপুরের মুন্ডা, আসামে খাসিদের মধ্যে এবং পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া, হুগলি ও পুরুলিয়ায় আজও মেগালিথ ব্যবস্থা রয়েছে।
৭৩. ইনামগাঁও কেন বিখ্যাত?
উঃ- ইনামগাঁও হল মহারাষ্ট্রের পুনে জেলার একটি প্রত্নক্ষেত্র তথা মেগালিথ কেন্দ্র।
৭৪. ঋগ্বেদ ও জেন্দ-আবেস্তায় কী কী মিল ও অমিল দেখা যায়?
উঃ- ঋগ্বেদ ও জেন্দ-আবেস্তায় ব্যবহৃত ভাষা ও বর্ণনায় বিভিন্ন মিল ও অমিল দেখা যায়। ঋগ্বেদে দেব বলতে বোঝায় সম্মানিত ব্যক্তি আবার আবেস্তায় দয়েব হল ঘৃণার পাত্র। আবেস্তায় শ্রেষ্ঠ দেবতা অহুর ভালো হলেও বৈদিক সাহিত্যে অসুর খারাপ বলে পরিচিত।
৭৫. বৈদিক সাহিত্য কয়টি ভাগে বিভক্ত ও কী কী?
উঃ- সমস্ত বৈদিক সাহিত্য চার ভাগে বিভক্ত। যথা-সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ। সংহিতার আবার চারটি ভাগ। যথা-ঋক্, সাম, যজুঃ ও অথর্ব। ঋগ্বেদ হল সবচেয়ে পুরোনো বৈদিক সংহিতা।
৭৬. পরবর্তী 'বৈদিক সাহিত্য' কাকে বলে?
উঃ- ঋগ্বেদ বাদে বাকি তিনটি সংহিতা অর্থাৎ সাম, যজুঃ, অথর্ব ও অন্যান্য বৈদিক সাহিত্যকে পরবর্তী বৈদিক সাহিত্য বলা হয়। এগুলি মূলতখ্রিস্টপূর্ব ১০০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দ পর্যন্ত সময়কালে রচিত হয়েছিল। এগুলি থেকে মূলত পরবর্তী বৈদিক যুগের ইতিহাস জানা যায়।
৭৭. বেদাঙ্গ কেন রচিত হয়েছিল? সংখ্যায় বেদাঙ্গ ক-টি?
উঃ- বৈদিক সাহিত্যগুলিকে ঠিক মতো উচ্চারণ করার জন্য বা এগুলির ছন্দ ও আসল অর্থ বোঝার জন্য রচিত হয় বেদাঙ্গ। বেদাঙ্গ হল সংখ্যায় ছ-টি। বেদাঙ্গতে নক্ষত্রের অবস্থান, বিভিন্ন নিয়ম, জ্যামিতির ধারণা প্রভৃতির আলোচনা রয়েছে।
৭৮. নির্ভুল উচ্চারণ ও বৈদিক মন্ত্রগুলি বলার দক্ষতা অর্জনের জন্য বৈদিক শিক্ষার দুটি প্রধান বিষয় কী ছিল?
উঃ- নির্ভুল উচ্চারণের জন্য বৈদিক সাহিত্যে রচিত হয়েছিল বেদাঙ্গ। বৈদিক মন্ত্র বলার দক্ষতা অর্জনের জন্য রচিত হয়েছিল যজুর্বেদ।
৭৯. কোন্ সময়কে আদি বৈদিক যুগ বলে?
উঃ- খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ থেকে ১০০০ অব্দ পর্যন্ত সময়কালকে আদি বৈদিক যুগ ধরা হয়। বৈদিক সাহিত্য অনুযায়ী বৈদিক যুগের দুটি ভাগ হল আদি বৈদিক যুগ ও পরবর্তী বৈদিক যুগ।
৮০. আমাদের দেশে প্রচলিত দুটি মহাকাব্যের নাম কী কী?
উঃ- আমাদের দেশে প্রচলিত দুটি মহাকাব্যের নাম হল-রামায়ণ ও মহাভারত। রামায়ণের মূল রচয়িতা হলেন বাল্মীকি, আর এর প্রধান কয়েকটি চরিত্র হল-রাম, সীতা, লক্ষ্মণ, রাবণ, মেঘনাদ প্রমুখ। মহাভারতের রচয়িতা হলেন বেদব্যাস। আর এর প্রধান কয়েকটি চরিত্র হল-অর্জুন, যুধিষ্ঠির, ভীম, কর্ণ, দুর্যোধন, কৃষ্ণ প্রমুখ।
৮১. বৈদিক যুগে প্রচলিত কয়েকটি যজ্ঞের নাম লেখো।
উঃ- বৈদিক যুগে প্রচলিত কয়েকটি যজ্ঞের নাম হল অশ্বমেধ যজ্ঞ, রাজসূয় যজ্ঞ, বাজপেয় যজ্ঞ ইত্যাদি। পুরোহিতদের পরামর্শে যুদ্ধে যাওয়ার আগে বা যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে রাজারা যজ্ঞ করতেন। যজ্ঞ করে রাজারা আসলে নিজেদের ক্ষমতা জাহির করতেন।
৮২. সভা ও সমিতি কী? অথবা, সভা ও সমিতি কাকে বলে?
উঃ- পরবর্তী বৈদিক যুগে রাজনীতিতে সভা ও সমিতির গুরুত্বের কথা জানা যায়। সভাতে বয়স্ক ব্যক্তিরা যোগ দিতেন, আর গোষ্ঠীর সবাই সম্ভবত সমিতির সদস্য ছিলেন। সমিতিতে নানারকম রাজনীতির বিষয়ে আলোচনা হত।
৮৩. রত্নিন কারা?
উঃ- ঋগ্বেদিক যুগে রাজাকে শাসনের কাজে যাঁরা সাহায্য করতেন তাঁদের রত্নিন বলা হত। তাঁদের থেকেই পরবর্তী সময়ের রাজনীতিতে মন্ত্রীর ধারণা এসেছে।
৮৪. বৈদিক যুগের মানুষের পেশা কী কী ছিল?
উঃ- বৈদিক যুগের মানুষের প্রধান পেশা ছিল পশুপালন। পরবর্তী বৈদিক যুগে স্থায়ীভাবে কৃষিকাজ শুরু হয়। লোহা ও অন্যান্য ধাতুর ব্যবহার কারিগরি শিল্পে উন্নতি ঘটিয়েছিল।
৮৫. বলি কী?
উঃ- ঋগ্বেদের যুগে প্রজারা স্বেচ্ছায় রাজাকে একধরনের কর দিতেন। এই করের নাম হল বলি। প্রজারা নিরাপদে থাকার জন্য এই কর দিতেন।
৮৬. বৈদিক যুগের ব্যবহৃত দুটি মুদ্রার নাম লেখো।
উঃ- বৈদিক যুগের ব্যবহৃত দুটি মুদ্রার নাম ছিল নিষ্ক, শতমান।
৮৭. 'চতুর্বর্ণ প্রথা' বলতে কী বোঝ? অথবা, পরবর্তী বৈদিক যুগে বর্ণাশ্রম প্রথা বলতে কী বোঝ?
উঃ- ঋবৈদিক যুগের শেষের দিকে সমাজে চতুর্বর্ণ বা বর্ণাশ্রম প্রথা চালু ছিল। এসময়ে অর্থাৎ পরবর্তী বৈদিক যুগের সমাজে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র এই চার বর্ণের অস্তিত্ব দেখা যায়। এই চার বর্ণ নিয়ে সমাজে যে প্রথার প্রচলন ছিল তার নাম চতুর্বর্ণ প্রথা।
৮৮. পরবর্তী বৈদিক সমাজে কী কী পেশা ছিল?
উঃ- পরবর্তী বৈদিক সমাজে চার বর্ণকে জন্মগত ধরে নিয়ে পেশা ঠিক হত। এ যুগের কয়েকটি পেশা ছিল পুজো, যজ্ঞ, বেদ পাঠ, কারিগরি, কৃষি, বাণিজ্য প্রভৃতি।
৮৯. বর্ণাশ্রমগুলি কী কী?
উঃ- ঋগ্‌বৈদিক সমাজে বর্ণাশ্রম বা চতুর্বর্ণ প্রথা প্রচলিত ছিল। এই প্রথা অনুযায়ী চারটি বর্ণ ছিল ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র।
৯০. সত্যকাম কার শিষ্য ছিলেন? সত্যকামের মা কে ছিলেন?
উঃ- সত্যকাম গুরু গৌতমের শিষ্য ছিলেন। সত্যকামের মা ছিলেন জবালা।
৯১. গোত্র বলতে কী বোঝ?
উঃ- বৈদিক যুগে গোষ্ঠীর গবাদিপশু রাখার জায়গাকে বলা হত গোত্র। পরে গোত্রের মানে দাঁড়ায় একই পূর্বপুরুষ থেকে আসা উত্তরাধিকারী। জাতিভেদপ্রথা কঠোর হওয়ার ক্ষেত্রে গোত্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
৯২. পরবর্তী বৈদিক যুগে নারীর অবস্থা খারাপ হয়েছিল কীভাবে?
উঃ- পরবর্তী বৈদিক যুগে দেখা যায় মেয়ে জন্মালে সকলে দুঃখ পেত। এ যুগে যুদ্ধ এবং সমিতির কাজে মেয়েরা যোগ দিতে পারত না। এ সময় সমাজে অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার প্রথাও চালু হয়েছিল।
৯৩. চতুরাশ্রম প্রথা কী ছিল?
উঃ- পরবর্তী বৈদিক যুগের জীবনযাপনের চারটি ভাগ বা পর্যায়কে চতুরাশ্রম বলা হত। এগুলি ছিল ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ এবং সন্ন্যাস।
৯৪. বেদের অপর নাম শ্রুতি কেন? অথবা, বেদের অপর নাম কী? এবং কেন বলা হয়?
উঃ- বৈদিক সাহিত্য মূলত শুনে শুনে মনে রাখতে হত। তাই বেদের অপর নাম শ্রুতি।
৯৫. ভেকস্তুতি বলতে কী বোঝ?
উঃ- ঋগ্বেদে ভেকস্তুতি বলে একটি অংশ আছে। সেখানে বলা আছে একটি ব্যাং ডাকলে অন্যান্য ব্যাং তার মতোই ডাকতে থাকে।
৯৬. স্নাতক কাদের বলা হত? অথবা, বৈদিক যুগে 'স্নাতক' কথাটির উদ্ভব কীভাবে হয়?
উঃ- বৈদিক যুগে বারো বছরের পড়াশোনা শেষে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ছাত্রদের স্নাতক হিসেবে ঘোষণা করা হত। এযুগে পড়াশোনার শেষে ছাত্রদের বিশেষ স্নান করার প্রথা চালু ছিল। এই বিশেষ স্নান থেকেই 'স্নাতক' কথাটি এসেছে।
৯৭. একলব্যের গল্প থেকে আমরা কী শিক্ষা লাভ করি?
উঃ- একলব্যের গল্প থেকে আমরা এই শিক্ষালাভ করি যে সাহসী ও পরিশ্রমী হলে যে-কোনো বিষয়ে সম্পূর্ণ শিক্ষালাভ সম্ভব। একলব্য যেভাবে এক টানা তির ছোড়া অভ্যাস করে বড়ো তিরন্দাজ হতে পেরেছিলেন, ঠিক তেমনই নিয়মিত অভ্যাস করলে যে-কোনো বিষয়ে আমরা পারদর্শী হতে পারি।
৯৮. মেগালিথ কেন্দ্র থেকে কী কী জিনিস পাওয়া গেছে?
উঃ- মেগালিথ কেন্দ্রগুলি থেকে কালো বা লাল মাটির বাসন, পাথর ও পোড়ামাটির তৈরি জিনিসপত্র পাওয়া গেছে। তা ছাড়া লোহা, সোনা, রুপো, ব্রোঞ্জের জিনিসও মিলেছে। ঘোড়া ও অন্যান্য জীবজন্তুর হাড়, মাছের কাঁটা ইত্যাদিও পাওয়া গেছে।
এই পোস্টের pdf পেতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন ⤵️ 

৯৯. বৈদিক সাহিত্য কি?
উঃ- বেদকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সাহিত্য হল বৈদিক সাহিত্য। বৈদিক সাহিত্যের চারটি ভাগ, যথা-সংহিতা, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক ও উপনিষদ। এগুলির মধ্যে সংহিতা হল চারটি-ঋক্, সাম, যজুঃ ও অথর্ব সংহিতাগুলি হল আসলে ছন্দে বাঁধা কবিতা। বৈদিক সংহিতার মধ্যে সবথেকে পুরোনো হল ঋগ্বেদ। ঋগ্বেদ ছাড়া বাকি তিনটি সংহিতা ও অন্যান্য সাহিত্যগুলি পরবর্তী বৈদিক সাহিত্য (ঋগ্বেদের পরের রচনা) নামে পরিচিত।
১০০. সপ্তসিন্ধু অঞ্চল বলতে কী বোঝায়?
উঃ- সিন্ধু নদ ও তার পূর্ব দিকের উপনদীগুলি দিয়ে ঘেরা অঞ্চলটির নাম ছিল সপ্তসিন্ধু অঞ্চল। এই অঞ্চলটি ছিল আদি বৈদিক যুগের মানুষের বাসস্থান।
বৈদিক যুগের প্রত্নতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য:
(ক) বৈদিক যুগে তামা ও ব্রোঞ্জ এবং এই যুগের শেষের দিকে লোহার ব্যবহার ছিল বলে জানা যায়।
(খ) এই যুগে ঘোড়ায় টানা রথ ও তিরধনুকের ব্যবহার প্রচলিত ছিল।
(গ) হরপ্পা সভ্যতার অবসানের পরে উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক অবশেষগুলি প্রমাণ করে বৈদিক সভ্যতা ছিল একটি গ্রামীণ সভ্যতা।
(ঘ) বৈদিক যুগে চিত্রিত ধূসর মাটির পাত্রের পাশাপাশি মাটির মূর্তি, তির ও বর্শার ফলা, আংটি, পেরেক, ছোরা, বড়শি, তামা-ব্রোঞ্জের গয়না মিলেছে।
১০১. বৈদিক যুগকে ক-টি ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?
উঃ- বৈদিক যুগকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, যথা-
(ক) আদি বৈদিক যুগ: আনুমানিক ১৫০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ১০০০ খ্রিস্টপূর্ব পর্যন্ত সময়কাল হল আদি বৈদিক যুগ। ঋগ্বেদ থেকে এই যুগের কথা জানা যায়।
(খ)পরবর্তী বৈদিক যুগ: আনুমানিক ১০০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ৬০০ খ্রিস্টপূর্ব পর্যন্ত সময়কাল হল পরবর্তী বৈদিক যুগ। ঋগ্বেদের পরবর্তী বৈদিক সাহিত্য থেকে এই যুগের কথা জানা যায়।
১০২. টীকা লেখো: মহাকাব্য।
উঃ- পরবর্তী বৈদিক সাহিত্যের একটি অংশ হল মহাকাব্য। মহাকাব্য শব্দের অর্থ হল মহৎ বা মহান কাব্য বা কবিতা। কোনো বিশেষ ঘটনা, কোনো দেবতা বা বড়ো ধরনের কোনো রাজবংশের শাসককে নিয়ে মহাকাব্য লেখা হত। মহাকাব্যে থাকত ভূগোল, গ্রহনক্ষত্র, গ্রাম-নগর প্রভৃতি বিষয়ের কথা। আর এতে থাকত সমাজজীবনের নানা দিকের কথা, রাজনীতির কথা, যুদ্ধ, উৎসবের কথা প্রভৃতি। মহাকাব্যগুলি সাতটি বা অন্তত আটটি সর্গ বা ভাগে বিভক্ত। কবির নাম, মূল ঘটনা বা কাব্যের প্রধান চরিত্রের নামে মহাকাব্যের নামকরণ করা হত। প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশে সবথেকে জনপ্রিয় দুই মহাকাব্য হল-রামায়ণ ও মহাভারত।
১০৩. চতুরাশ্রম প্রথা কী? অথবা, চতুরাশ্রম সম্পর্কে টীকা লেখো।
উঃ- পরবর্তী বৈদিক যুগে জীবনযাপনের চারটি ভাগ বা পর্যায়ের নাম ছিল চতুরাশ্রম। এই চারটি ভাগ বা পর্যায় ছিল যথাক্রমে ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য, বানপ্রস্থ ও সন্ন্যাস।
(ক) ব্রহ্মচর্যাশ্রম: এই পর্যায়ে ছাত্রদের তার গুরুগৃহে থেকে শিক্ষালাভ করতে হত।
(খ) গার্হস্থ্যাশ্রম: শিক্ষালাভের শেষে বিয়ে করে জীবনযাপনের এই পর্যায়ের নাম ছিল গার্হস্থ্যাশ্রম।
(গ) বানপ্রস্থাশ্রম: এই পর্যায়ে সংসার থেকে দূরে কোনো বনে কুটির তৈরি করে, সেখানে ধর্ম চর্চা করতে হত।
(ঘ) সন্ন্যাস আশ্রম: সবকিছু ভুলে ঈশ্বর চিন্তায় ডুবে থেকে শেষ জীবন কাটানোর এই পর্যায়কে সন্ন্যাস আশ্রম বলা হত।
   পরবর্তী বৈদিক যুগে শুধুমাত্র শূদ্রদের এই ধরনের জীবনযাপনের অধিকার ছিল না।
১০৪. গোপতি, মহীপতি ও নরপতির মধ্যে পার্থক্য কী?
উঃ- ঋগ্বেদে রাজা শব্দের নানারকম ব্যবহার রয়েছে।
(ক)গোপতি: রাজা হলেন গোপতি বা গবাদিপশুর প্রভু।
(খ) মহীপতি: রাজা হলেন ভূপতি বা মহীপতি। ভূপতি বলতে বোঝায় ভূ অর্থাৎ জমির পতি বা মালিক আর মহীপতি বলতে বোঝায় পৃথিবীর রাজা।
(গ) নরপতি: নৃ বা নর শব্দের অর্থ হল মানুষের রক্ষাকারী। এক্ষেত্রে রাজ্যের প্রজার বা জনগণের প্রধান হিসেবে রাজার উপাধি হল নরপতি বা নৃপতি।
১০৫. বৈদিক সমাজ কেমন ছিল?
উঃ-  বৈদিক সাহিত্য থেকে বৈদিক সমাজের নানা কথা জানা যায়।
(ক) পিতৃতান্ত্রিক: বৈদিক যুগে সমাজ ছিল পিতৃতান্ত্রিক অর্থাৎ পরিবারে ও সমাজে পিতা বা বাবা ছিলেন প্রধান।
(খ) চতুরাশ্রম: বৈদিক যুগের শেষের দিকে সমাজে জীবনযাপনের চারটি ভাগ বা পর্যায়ের নাম ছিল চতুরাশ্রম। যথা-ব্রহ্মচর্যাশ্রম, গার্হস্থ্যাশ্রম, বানপ্রস্থাশ্রম, সন্ন্যাস আশ্রম।
(গ) বিভিন্ন গোষ্ঠী: বৈদিক সমাজে বিভিন্ন গোষ্ঠী ছিল। যেমন- পুরোহিত, যোদ্ধা, ব্যবসায়ী, কৃষক, পশুপালক, শ্রমিক, জেলে প্রমুখ।
(ঘ) অন্যান্য দিক: বৈদিক সংস্কৃতির মানুষেরা পাথর ও তামার অস্ত্রশস্ত্র, কালো ও নানা রঙের মাটির পাত্রের ব্যবহার জানত।
(ঙ) নারীর অবস্থান: বৈদিক সমাজে নারীর শিক্ষালাভ, যুদ্ধে ও যজ্ঞে অংশ নেওয়ার অধিকার ছিল।
১০৬. পরবর্তী বৈদিক যুগে আর্যদের সমাজজীবন কেমন ছিল?
উঃ- পরবর্তী বৈদিক যুগে আর্যদের সমাজজীবনের বিভিন্ন দিক ছিল নিম্নরূপ-
(ক) চতুর্বর্ণ প্রথা: পরবর্তী বৈদিক যুগে চারটি বর্ণ ছিল ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র।
(খ) পেশা: পরবর্তী বৈদিক সমাজে চারবর্ণকে জন্মভিত্তিক ধরে নিয়ে পেশা ঠিক করা শুরু হয়।
(গ) নারীর অবস্থান: পরবর্তী বৈদিক সমাজে মেয়ে জন্মালে পরিবারে সকলে দুঃখ পেত। যুদ্ধে বা সমিতির কাজে নারীরা যোগ দিতে পারত না।
(ঘ) খাদ্যাভ্যাস: পরবর্তী বৈদিক সমাজে যবের পাশাপাশি গম ও ধান ছিল প্রধান খাদ্যশস্য।
১০৭. টীকা লেখো: মেগালিথ।
উঃ- প্রাচীন ভারতে বিভিন্ন অঞ্চলের জনগোষ্ঠী বড়ো বড়ো পাথর দিয়ে নিজ পরিবারের মৃতদের যে সমাধি চিহ্নিত করত, তার নাম ছিল মেগালিথ।
(ক) বিভিন্ন রূপ: বিভিন্ন প্রকারের মেগালিথ দেখতে পাওয়া যায়, যথা-আকাশের দিকে তাকানো, বৃত্তাকারে সাজানো, পাথরের ওপর একটি বড়ো পাথর দিয়ে সাজানো বা পাহাড় কেটে গুহার মতো বানানো প্রভৃতি।
(খ) মেগালিথ কেন্দ্র: ভারতের কয়েকটি বিখ্যাত মেগালিথ কেন্দ্র হল কাশ্মীরের বুরজাহোম, রাজস্থানের ভরতপুর, মহারাষ্ট্রের পুনে জেলার প্রত্নক্ষেত্র, ইনামগাঁও প্রভৃতি।
(গ) গুরুত্ব: (i) মেগালিথগুলিতে ব্যবহৃত জিনিসগুলি থেকে বোঝা যায় সেসময় সমাজে ধনী-দরিদ্র ভাগ ছিল। (ii) মেগালিথগুলি থেকে জানা যায় কোনো কোনো জায়গায় একটি পরিবারের সব সদস্যকে একসঙ্গে সমাধি দেওয়া হত।
১০৮. টীকা লেখো: ইনামগাঁও।
উঃ- ইনামগাঁও হল বৈদিক যুগের একটি মেগালিথ কেন্দ্র।
(ক) অবস্থান: মহারাষ্ট্রের পুনে জেলায় ভীমা নদীর উপত্যকায় এটি অবস্থিত। এখানে খ্রিস্টপূর্ব ১৪০০ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দ সময়কালের মানুষের বসবাস ছিল।
(খ) জীবিকা: এখানকার অধিবাসীদের প্রধান জীবিকা ছিল কৃষি, পশুপালন ও মৎস্যশিকার। এখানে একটি সেচখালের (৬ মিটার চওড়া ও ৪২০ মিটার লম্বা) ভগ্নাবশেষ মিলেছে।
(গ) খাদ্যশস্য: এখানে উৎপন্ন প্রধান কয়েকটি খাদ্যশস্য ছিল যব, গম, ধান ও ডাল।
(ঘ) ঘরবাড়ি: এখানে প্রায় ১৩৪টি আয়তাকার ঘরের খোঁজ পাওয়া গেছে। পরবর্তীকালে এখানে আয়তাকার বাড়ির বদলে ছোটো ছোটো গোলাকার কুঁড়েঘর তৈরি হত বলে জানা গেছে। বাড়িতে শস্য মজুত রাখার জন্য জালা এবং আগুন জ্বালানোর জন্য গর্ত তৈরি করা হত।
(ঙ) সমাধি: জানা গেছে বাড়ির লাগোয়া সমাধি ক্ষেত্র তৈরি হত। পাঁচটি ঘরবিশিষ্ট একটি বড়ো বাড়িতে উত্তর দিকে মাথা করা একটি সমাধি মিলেছে। এ ছাড়াও দামি পাথরের হার পড়া ২ বছর বয়সী একটি ছোটো মেয়ের সমাধিও মিলেছে।
(চ) শিল্পকীর্তি: পাত্রের গায়ে ষাঁড়ে টানা গাড়ির ছবি এবং প্রাপ্ত দুটি দেবী মূর্তি (মাথাহীন ও মাথা সমেত) এখানকার শিল্পকীর্তির পরিচয় দেয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন for "ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের ধারা: ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাস (চতুর্থ অধ্যায়)"