দিল্লির সুলতানী সাম্রাজ্য: সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস।


১. মহম্মদ ঘুরি মারা গেলে তাঁর জয় করা অঞ্চলগুলি ভাগ হয়ে যায় তাঁর কোন্ চারজন অনুচরের মধ্যে?

উঃ- মহম্মদ ঘুরি মারা গেলে তাঁর জয় করা অঞ্চলগুলি ভাগ হয়ে যায় তাজউদ্দিন ইয়ালদুজ, নাসিরউদ্দিন কুবাচা, বখতিয়ার খলজি, কুতুবউদ্দিন আইবক-তাঁর এই চারজন অনুচরের মধ্যে।

২. 'সুলতানৎ' বা 'সুলতানি' কাকে বলে?
উঃ- যে অঞ্চলে সুলতানের কর্তৃত্ব চলত, তাকে বলা হত 'সুলতানৎ' বা 'সুলতানি'।

৩. কেন সুলতানি শাসনের নাম হয় দিল্লি সুলতানি বা সুলতানৎ?
উঃ- ত্রয়োদশ শতকে দিল্লিকে কেন্দ্র করে ভারতবর্ষে সুলতানি শাসকদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব স্থাপিত হয় এবং তাই সেই সাম্রাজ্যের নাম হয় দিল্লি সুলতানি বা সুলতানৎ।

৪. মহম্মদ ঘুরির মৃত্যুর পর তাজউদ্দিন ইলদুজ কোথায় শাসন করার অধিকার পান?
উঃ- মহম্মদ ঘুরির মৃত্যুর পর তাজউদ্দিন ইলদুজ গজনি অঞ্চল শাসন করার অধিকার পান।

৫. খুতবা কী?
উঃ- শুক্রবারের দুপুরের নামাজের পরে মসজিদের ইমাম সবার সামনে যে ভাষণ পাঠ করেন, তাকে খুতবা বলা হয়।

৬. 'জোহরের নামাজ' বলতে কী বোঝ?
উঃ- মুসলমানদের দুপুরের নামাজ বা প্রার্থনাকে 'জোহরের নামাজ' বলে।

৭. বাগদাদের খলিফা ইলতুৎমিশকে যে আনুষ্ঠানিক পোশাক পাঠান তার নাম কী?
উঃ- বাগদাদের খলিফা ইলতুৎমিশকে যে আনুষ্ঠানিক পোশাক পাঠান তার নাম খিলাত।

৮. কোন্ সুলতান দু-বার খলিফার অনুমোদন পান?
উঃ- ফিরোজ শাহ তুঘলক দু-বার খলিফার অনুমোদন পান।

৯. কাদের আমির বলা হত?
উঃ- সুলতানি যুগে শাসনকার্যে নিযুক্ত, বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আমির বলা হত।

১০. বাগদাদের খলিফা ইলতুৎমিশকে কী পাঠিয়েছিলেন?
উঃ- বাগদাদের খলিফা ইলতুৎমিশকে দুরবাশ ও খিলাত পাঠিয়েছিলেন।

১১. দুরবাশ কী?
উঃ- স্বাধীন শাসনের প্রতীকদণ্ড ছিল দুরবাশ যা দিল্লির সুলতানরা খলিফার কাছ থেকে অর্জন করত।

১১. কোন্ খলিফা ইলতুৎমিশকে দিল্লির সুলতানরূপে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন?
উঃ- বাগদাদের খলিফা অল-মুসতানসির বিল্লাহ্ ইলতুৎমিশকে দিল্লির সুলতানরূপে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।

১৩. ইলতুৎমিশ ও আলাউদ্দিন খলজির শাসনকালের মধ্যে দুজন গুরুত্বপূর্ণ সুলতান কারা ছিলেন?
উঃ- ইলতুৎমিশ ও আলাউদ্দিন খলজির শাসনকালের মধ্যে দুজন গুরুত্বপূর্ণ সুলতান ছিলেন সুলতান রাজিয়া ও গিয়াসউদ্দিন বলবন।

১৪. দিল্লি সুলতানির ইতিহাসে প্রথম এবং শেষ মহিলা সুলতান কে ছিলেন?
উঃ- দিল্লি সুলতানির ইতিহাসে প্রথম ও শেষ মহিলা সুলতান ছিলেন রাজিয়া।

১৫. ইলতুৎমিশের পর কে দিল্লির সিংহাসনে বসেন?
উঃ- ইলতুৎমিশের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র বুকনউদ্দিন ফিরোজ দিল্লির সিংহাসনে বসেন।

১৬. সুলতান রাজিয়া কার কন্যা ছিলেন?
উঃ- সুলতান রাজিয়া ইলতুৎমিশের কন্যা ছিলেন।

১৭. কোন্ ঐতিহাসিক রাজিয়াকে সুলতান বলেই উল্লেখ করেন?
উঃ- ঐতিহাসিক মিনহাজ ই সিরাজ রাজিয়াকে সুলতান বলেই উল্লেখ করেন।

১৮. কত খ্রিস্টাব্দে সুলতান রাজিয়ার মৃত্যু হয়?
উঃ- ১২৪০ খ্রিস্টাব্দে সুলতান রাজিয়ার মৃত্যু হয়।

১৯. 'তুর্কান-ই চিহলগানি' শব্দের আক্ষরিক অর্থ কী?
উঃ- 'তুর্কান-ই চিহলগানি' শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল চল্লিশ জন তুর্কি বা চল্লিশটি তুর্কি পরিবার।

২০. কে বন্দেগান-ই চিহলগানি থেকে পরে দিল্লির সুলতান হয়েছিলেন?
উঃ- গিয়াসউদ্দিন বলবন বন্দেগান-ই-চিহলগানি থেকে পরে দিল্লির সুলতান হয়েছিলেন।

২১. ইলতুৎমিশের মৃত্যুর পর তাঁর বংশের শাসকরা কত বছর শাসন করেছিলেন?
উঃ- ইলতুৎমিশের মৃত্যুর পর তাঁর বংশের শাসকরা তিরিশ বছর শাসন করেছিলেন।

২২. 'বান্দা' শব্দের অর্থ কী?
উঃ- 'বান্দা' শব্দের অর্থ সেবক বা অনুগামী।

২৩. তুর্কান-ই চিহলগানি কে গড়ে তোলেন?
উঃ-  তুর্কান-ই চিহলগানি গড়ে তোলেন ইলতুৎমিশ।

২৪. আলাউদ্দিন খলজির দক্ষিণ ভারত অভিযানে কে নেতৃত্ব দেন?
উঃ- আলাউদ্দিন খলজির দক্ষিণ ভারত অভিযানে নেতৃত্ব দেন তাঁর সেনাপতি মালিক কাফুর।

২৫. খলজি বংশের প্রথম শাসক কে?
উঃ- খলজি বংশের প্রথম শাসক জালাল উদ্দিন ফিরোজ খলজি।

২৬. খলজি বিপ্লব কাকে বলে?
উঃ- বলবনের বংশধরদের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়ে (১২৯০ খ্রি.) জালালউদ্দিন ফিরোজ খলজির দিল্লির সুলতান হওয়ার ঘটনাকে খলজি বিপ্লব বলে।

২৭. খলজি বিপ্লবের ফলাফল কী হয়েছিল?
উঃ- খলজি বিপ্লবের ফলে দিল্লি সুলতানির প্রশাসনিক ব্যবস্থায় ইলবারি তুর্কি অভিজাতদের ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং তার বদলে তুর্কি ও হিন্দুস্তানিদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

২৮. গিয়াসউদ্দিন বলবনের শাসনের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী ছিল?
উঃ- গিয়াসউদ্দিন বলবনের শাসনের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল শক্তিশালী কেন্দ্রীভূত শাসন প্রতিষ্ঠা করা।

২৯. আলাউদ্দিন খলজি কবে সিংহাসনে বসেন?
উঃ- আলাউদ্দিন খলজি ১২৯৬ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে বসেন।

৩০. ইবন বতুতা কোথাকার অধিবাসী ছিলেন?
উঃ- ইবন বতুতা উত্তর আফ্রিকার মরক্কো দেশের তাঞ্জিয়ার শহরের অধিবাসী ছিলেন।

৩১. কোন্ সুলতান দৌলতাবাদে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন?
উঃ- সুলতান মহম্মদ বিন তুঘলক দৌলতাবাদে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন।

৩২. মহম্মদ বিন তুঘলকের দ্বিতীয় রাজধানীর নাম কী?
উঃ- মহম্মদ বিন তুঘলকের দ্বিতীয় রাজধানীর নাম ছিল দৌলতাবাদ।

৩৩. কোন উদ্দেশ্যে মহম্মদ বিন তুঘলক তাঁর রাজধানীকে দিল্লি থেকে দেবগিরিতে স্থানান্তরিত করেছিলেন?
উঃ- মোঙ্গল আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে এবং দাক্ষিণাত্যকে ঠিকমতো শাসন করার উদ্দেশ্যে মহম্মদ বিন তুঘলক তাঁর রাজধানীকে দিল্লি থেকে দেবগিরিতে স্থানান্তরিত করেন।

৩৪. সৈয়দ এবং লোদি সুলতানদের শাসনকালে (১৪১৪-১৫২৬ খ্রি.) কোথায় কোথায় স্বাধীন সুলতানি রাজ্য গড়ে উঠেছিল?
উঃ- সৈয়দ এবং লোদি সুলতানদের শাসনকালে (১৪১৪-১৫২৬ খ্রি.) জৌনপুর, গুজরাট, মালওয়া ও বাংলায় স্বাধীন সুলতানি রাজ্য গড়ে উঠেছিল।

৩৫. ফিরোজ শাহের দাসের সংখ্যা কত ছিল?
উঃ- ফিরোজ শাহের দাসের সংখ্যা ছিল ১,৮০,০০০।

৩৬. সৈয়দ ও লোদি আমলে ভারতের একটি স্বাধীন রাজ্যের নাম লেখো।
উঃ- সৈয়দ ও লোদি আমলে ভারতের একটি স্বাধীন রাজ্য ছিল বাংলা।

৩৭. দিল্লির সুলতানদের শাসনকে তুর্কো-আফগান শাসন বলা হয় কেন?
উঃ- দিল্লি সুলতানির প্রথম দিকের শাসকরা ছিলেন তুর্কি এবং পরের দিকের সৈয়দ ও লোদি শাসকরা ছিলেন আফগান, তাই দিল্লির সুলতানদের শাসনকে একসঙ্গে তুর্কো-আফগান শাসন বলা হয়।

৩৮. লোদি বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?
উঃ- লোদি বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বহলোল লোদি।

৩৯. সৈয়দ বংশের প্রতিষ্ঠাতার নাম কী?
উঃ-  সৈয়দ বংশের প্রতিষ্ঠাতার নাম ছিল খিজির খান।

৪০. কোন্ সুলতান আফগানদের সাবেকি রীতি মেনে অন্যান্য আফগান সর্দারদের সঙ্গে আসন ভাগ করেন?
উঃ- বহলোল লোদি আফগানদের সাবেকি রীতি মেনে অন্যান্য আফগান সর্দারদের সঙ্গে আসন ভাগ করেন।

৪১. কত খ্রিস্টাব্দে দিল্লিতে তথাকথিত দাস বংশ প্রতিষ্ঠিত হয়?
উঃ- দিল্লিতে ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে দাস বংশ প্রতিষ্ঠিত হয়।

৪২. ইলতুৎমিশ কোন্ বংশের সুলতান ছিলেন?
উঃ- ইলতুৎমিশ দাস বংশের সুলতান ছিলেন।

৪৩. মহম্মদ বিন তুঘলক কোন্ বংশের সুলতান ছিলেন?
উঃ- মহম্মদ বিন তুঘলক দাস বংশের সুলতান ছিলেন।

৪৪. কাদের মধ্যে পানিপতের প্রথম যুদ্ধ হয়?
উঃ- বাবর ও ইব্রাহিম লোদির মধ্যে পানিপতের প্রথম যুদ্ধ হয়।

৪৫. রুমি যুদ্ধকৌশল কে, কার কাছ থেকে শিখেছিলেন?
উঃ- বাবর তুর্কিদের কাছ থেকে রুমি যুদ্ধকৌশল শিখেছিলেন।

৪৬. পানিপতের প্রথম যুদ্ধের ফলাফল কী ছিল?
উঃ- পানিপতের প্রথম যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদি পরাজিত ও নিহত হন এবং বাবর জয়ী হয়ে দিল্লিতে মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।

৪৭. প্রথম পানিপতের যুদ্ধে বাবর কোন্ রণকৌশল ব্যবহার করেন?
উঃ- প্রথম পানিপতের যুদ্ধে বাবর 'রুমি' রণকৗশল ব্যবহার করেন।

৪৮. বলবন সুলতান হয়ে কোন্ কোন্ দুর্গ সুরক্ষিত করেন?
উঃ- বলবন সুলতান হয়ে (১২৬৬-৮৭ খ্রি.) তাবরহিন্দ (ভাতিন্দা), সুনাম ও সামানা দুর্গ সুরক্ষিত করেন।

৪৯. কীভাবে আলাউদ্দিন মোঙ্গল আক্রমণের মোকাবিলা করেন?
উঃ- আলাউদ্দিন খলজি দুর্গনির্মাণ, সৈন্যসংগ্রহ ও মূল্যনিয়ন্ত্রণ করে সফলভাবে মোঙ্গল আক্রমণের মোকাবিলা করেন।

৫০. কেন্দ্রীভূত সুলতানি রাষ্ট্রব্যবস্থা বলতে কী বোঝায়?
উঃ- সুলতানকে কেন্দ্র করে সুলতানি সাম্রাজ্যের রাজধানী দিল্লিতে যে রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে ওঠে তাকে কেন্দ্রীভূত সুলতানি রাষ্ট্রব্যবস্থা বলে।

৫১. আলিম কাকে বলে?
উঃ- যারা ইসলামি শাস্ত্রে বিশেষভাবে পণ্ডিত তাদের আলিম বলে।

৫২. উলেমা কাদের বলে?
উঃ- একের বেশি আলিমকে বলা হয় উলেমা।

৫৩. ইকতাদার বা মুক্তি বা ওয়ালি কাকে বলা হত? অথবা, ইকতাদার কাদের বলা হত?
উঃ- সুলতানি আমলে ইকতার দায়িত্ব পালনকারী সামরিক নেতাকে ইকতাদার বা মুক্তি বা ওয়ালি বলা হত।

৫৪. ছোটো ইকতার শাসক কী দায়িত্ব পালন করতেন?
উঃ- ছোটো ইকতার শাসক শুধু সামরিক দায়িত্ব পালন করতেন।

৫৫. বড়ো ইকতার শাসকদের কী কী দায়িত্ব পালন করতে হত?
উঃ- বড়ো ইকতার শাসকদের সামরিক দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে প্রশাসনিক দায়িত্বও পালন করতে হত, অর্থাৎ তাদের সৈন্যবাহিনীর দেখাশোনা করা, বাড়তি রাজস্ব সুলতানকে দেওয়া, শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা ইত্যাদি দায়িত্ব নিতে হত।

৫৬. দিল্লি সুলতানির কোন্ শাসক ইকতা প্রথা প্রবর্তন করেন?
উঃ- দিল্লি সুলতানির শাসক ইলতুৎমিশ ইকতা প্রথা প্রবর্তন করেন।

৫৭. তিমার কাকে বলা হয়?
উঃ- অটোমান তুর্কিদের আমলে ইকতা ব্যবস্থার পরিবর্তে একই ধরনের অন্য একটি ব্যবস্থার কথা জানা যায়, যাকে বলা হয় তিমার।

৫৮. দোয়াব অঞ্চল কোনটি?
উঃ- গঙ্গা-যমুনা নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলটি হল দোয়াব অঞ্চল।

৫৯. সুলতান আলাউদ্দিন খলজি ভূমিরাজস্ব ছাড়াও কী কী কর রাজাদের কাছ থেকে আদায় করার নির্দেশ দেন?
উঃ- সুলতান আলাউদ্দিন খলজি ভূমিরাজস্ব ছাড়াও গৃহকর, গোচারণভূমি কর, জিজিয়া ইত্যাদি কর রাজাদের কাছ থেকে আদায় করার নির্দেশ দেন।

৬০. ফিরোজ শাহ তুঘলকের আমলে কয়টি ও কী কী কর আদায় করা হত?
উঃ- ফিরোজ শাহ তুঘলকের আমলে চারটি কর আদায় করা হত, যথা- খরাজ, খাম্স, জিজিয়া ও জাকাত।

৬১. জাকাত কী?
উঃ- জাকাত হল সুলতানি যুগে মুসলমানদের সম্পত্তির ওপর আরোপ করা এক ধরনের কর।

৬২. জিজিয়া কর আদায়ের বিনিময়ে মুসলমান শাসকরা অ-মুসলমান প্রজাদের কী অধিকার ও সুরক্ষা দিতেন?
উঃ- জিজিয়া কর আদায়ের বিনিময়ে মুসলমান শাসক অ-মুসলমান প্রজাদের জীবন, নিজেদের ধর্ম পালনের অধিকার ও তাদের সম্পত্তির সুরক্ষা দিতেন।

৬৩. কখন, কে ও কোথায় প্রথম জিজিয়া কর চালু করেছিলেন? অথবা, জিজিয়া কর চালু করেছিলেন কে?
উঃ- খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে আরবের সেনাপতি মহম্মদ বিন কাশিম সিন্ধু প্রদেশে জিজিয়া কর চালু করেছিলেন।

৬৪. দিল্লি সুলতানিতে কাদেরকে জিজিয়া কর দিতে হত না?
উঃ- দিল্লি সুলতানিতে ব্রাহ্মণ, নারী, নাবালক ও দাসদের জিজিয়া দিতে হত না এবং সন্ন্যাসী, অন্ধ, খঞ্জ ও উন্মাদ ব্যক্তিরা গরিব বলে তারাও এই করপ্রদান থেকে রেহাই পেত।

৬৫. তুরুষ্কদণ্ড কর বলতে কী বোঝ?
উঃ- তুরুষ্কদণ্ড হল আসলে হিন্দু রাজাদের দ্বারা তুর্কিদের/মুসলমানদের ওপর চাপানো এক ধরনের কর।

৬৬. আলাউদ্দিন কেন দোয়াব অঞ্চলের কৃষকদের ওপর বেশি হারে কর চাপান?
উঃ- আলাউদ্দিন খলজি সেনাবাহিনীকে রসদ জোগানোর জন্য দোয়াব অনঞ্চলের কৃষকদের ওপর বেশি হারে কর চাপান।

৬৭. খাম্স কী?
উঃ- খাম্স হল যুদ্ধের সময় লুঠ-করা ধনসম্পদের একটি অংশ।

৬৮. 'শাহানা-ই-মান্ডি' বলতে কাকে বোঝানো হয়?
উঃ- আলাউদ্দিন খলজির আমলে বাজারদর তদারকির জন্য নিযুক্ত কর্মচারীকে বলা হত 'শাহানা-ই-মান্ডি'।

৬৯. দিল্লি সুলতানির শেষদিকে উত্থান ঘটে এমন কয়েকটি আঞ্চলিক শক্তির নাম লেখো।
উঃ- দিল্লি সুলতানির শেষদিকে উত্থান ঘটে এমন কয়েকটি আঞ্চলিক শক্তির নাম হল বাংলার ইলিয়াসশাহি এবং হোসেনশাহি শাসন এবং দক্ষিণ ভারতে বিজয়নগর ও বাহমনি রাজ্যের শাসন।

৭০. কবে শামসউদ্দিন ইলিয়াস শাহ লখনৌতির সিংহাসনে বসেন?
উঃ- ১৩৪২ খ্রিস্টাব্দে শামসউদ্দিন ইলিয়াস শাহ লখনৌতির সিংহাসনে বসেন।

৭১. হাবশি কাদের বলা হত?
উঃ- আফ্রিকার আবিসিনিয়া বা ইথিওপিয়া থেকে বাংলায় আসা ইলিয়াসশাহি এবং হোসেনশাহি শাসনের মধ্যবর্তী সময়ের শাসকদের হাবশি বলা হত।

৭২. একডালা দুর্গ কোথায় অবস্থিত?
উঃ- একডালা দুর্গটি গৌড়ের অদূরে গঙ্গার দুই শাখানদী চিরামতি এবং বালিয়া দ্বারা বেষ্টিত ছিল।

৭৩. রূপ ও সনাতন কোন্ সময়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন?
উঃ- রূপ গোস্বামী জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৪৮৯ খ্রিস্টাব্দে এবং সনাতন গোস্বামী জন্মগ্রহণ করেন ১৪৮৮ খ্রিস্টাব্দে।

৭৪. হোসেনশাহি আমলে দবির-ই-খাস বলতে কী বোঝানো হত? অথবা, দবির-ই-খাস কাদের বলা হত?
উঃ- হোসেনশাহি আমলে সুলতান হোসেন শাহের ব্যক্তিগত সচিবকে দবির-ই-খাস বলা হত।

৭৫. হোসেনশাহি আমলে বাংলায় কার নেতৃত্বে ভক্তিবাদের প্রচার শুরু হয়?
উঃ- হোসেনশাহি আমলে বাংলায় শ্রীচৈতন্যের নেতৃত্বে ভক্তিবাদের প্রচার শুরু হয়।

৭৬. বাংলার কোন্ সুলতান শ্রীচৈতন্যের ভক্ত ছিলেন?
উঃ- বাংলার সুলতান হোসেন শাহ ছিলেন শ্রীচৈতন্যের ভক্ত।

৭৭. বাংলার কোন্ শাসককে সাধারণ মানুষ কৃষ্ণের অবতার বলে মনে করত?
উঃ- বাংলার শাসক হোসেন শাহকে সাধারণ মানুষ কৃষ্ণের অবতার বলে মনে করত।

৭৮. কত খ্রিস্টাব্দে বিজয়নগর রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়?
উঃ- ১৩৩৬ খ্রিস্টাব্দে বিজয়নগর রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

৭৯. কীভাবে সালুভ বংশের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়?
উঃ- সঙ্গম বংশের দুর্বল শাসক বিরূপাক্ষকে সরিয়ে নরসিংহ সালুভ বিজয়নগরে সালুভ বংশের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।

৮০. কীভাবে তুলুভ বংশের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়?
উঃ- সালুভ রাজবংশের সেনাপতির ছেলে বীরসিংহ সালুভ বংশের উচ্ছেদ ঘটিয়ে তুলুভ বংশের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।

৮১. বাহমনি রাজ্যের চারটি ভাগের নাম লেখো।
উঃ- বাহমনি রাজ্যের চারটি ভাগ ছিল গুলবর্গা, দৌলতাবাদ, বেরার এবং বিদর।

৮২. সঙ্গম বংশের একজন রাজার নাম লেখো।
উঃ- সঙ্গম বংশের একজন রাজা ছিলেন প্রথম হরিহর।

৮২. বাহমনি রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা কে ছিলেন?
উঃ- বাহমনি রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন হাসান গঙ্গু।

৮৩. তালিকোটার যুদ্ধ কত সালে হয়েছিল?
উঃ- ১৫৬৫ সালে বিজয়নগরের সঙ্গে দাক্ষিণাত্যের স্বাধীন সুলতানি রাজ্য যথা আহমেদনগর, বিজাপুর, বেরার, গোলকুন্ডা এবং বিদরের মিলিত জোটের মধ্যে বানিহাটি বা তালিকোটার যুদ্ধ হয়।

৮৪. কে বাহমনি রাজ্যের গৌরব বৃদ্ধি করেন? 
উঃ- মাহমুদ গাওয়ান বাহমনি রাজ্যের গৌরব বৃদ্ধি করেন।

৮৫. কোন্ অঞ্চলকে রাইচুর দোয়াব বলা হত?
উঃ- কৃষ্ণা এবং তুঙ্গভদ্রা নদীর অববাহিকা অঞ্চলকে রাইচুর দেয়াব বলা হত।

৮৬. দক্ষিণি কাদের বলা হত?
উঃ- বাহমনি রাজ্যের দেশীয় অভিজাতদের বলা হত দক্ষিণি।

৮৭. পরদেশি বলতে কাদের বোঝানো হত?
উঃ- বাহমনি রাজ্যের বাইরে থেকে যে অভিজাতরা এসে দরবারে স্থান পেতেন তাদের বলা হত পরদেশি।

৮৮. কোন্ রাজ্যের হিন্দু রাজারা নিজেদের সুলতান বলতেন?
উঃ- বিজয়নগর রাজ্যের হিন্দু শাসকরা নিজেদের সুলতান বলতেন।

৮৯. বিজয়নগরের কোন্ রাজা তুর্কি যুদ্ধপদ্ধতি অনুসরণ করেন?
উঃ- বিজয়নগরের রাজা দ্বিতীয় দেবরায় তুর্কি যুদ্ধপদ্ধতি অনুসরণ করেন।

৯০. বিজয়নগর সাম্রাজ্যে আগত একজন বিদেশি পর্যটকের নাম লেখো।
উঃ- বিজয়নগর সাম্রাজ্যে আগত একজন বিদেশি পর্যটকের নাম নিকোলো কন্টি।

৯১. খলজি বিপ্লব কী?
উঃ- ১২৯০ খ্রিস্টাব্দে জালালউদ্দিন ফিরোজ খলজি অসুস্থ কায়কোবাদ ও তাঁর শিশুপুত্র কায়ুমার্সকে হত্যা করে দিল্লির সিংহাসনে। বসেন। হিন্দুস্থানি অভিজাতদের নেতা জালালউদ্দিন সিংহাসনে। বসায় ভারতে খলজি হিন্দুস্থানিদের ক্ষমতা বেড়ে যায় আর ইলবারি তুর্কিদের ক্ষমতা কমে যায়। দিল্লির ক্ষমতার এই পালাবদল খলজি। বিপ্লব নামে পরিচিত।

৯২. 'সিজদা' ও 'পাইবস' বলতে কী বোঝ?
উঃ- রাজকীয় ক্ষমতা জাহির করার জন্য দিল্লির শাসক গিয়াসউদ্দিন বলবন 'সিজদা' ও 'পাইবস' নামক পারসিক রীতি দুটি চালু করেছিলেন। সুলতানকে সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করাই হল সিজদা। আর পাইবস ছিল সম্রাটের পদযুগল চুম্বন করার এক প্রথা।

৯৩. উলাক ও দাওআ কী?
উঃ- ইবন বতুতার বিবরণ থেকে জানা যায় যে মহম্মদ বিন তুঘলকের - সময় যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে অন্যতম দুটি ব্যবস্থা ছিল উলাক এবং দাওআ।
উলাক: এই সময়ে ঘোড়ার ডাকের যে ব্যবস্থা ছিল তাকে উলাক বলা হত। এই ব্যবস্থায় প্রতি চার মাইল অন্তর ডাকের ঘোড়া রাখা হত।
দাওআ: এই সময়ে পায়ে হাঁটা ডাকের যে ব্যবস্থা ছিল তাকে দাওআ - বলা হত। এই ব্যবস্থায় প্রত্যেক মাইলের এক-তৃতীয়াংশে ঘন বসতির দ একটি গ্রাম থাকত এবং তার বাইরে তিনটি তাঁবুতে ডাকের লোকেরা প্রস্তুত থাকত।

৯৪. দিল্লির সুলতানদের কখন খলিফাদের অনুমোদন দরকার হতো?
উঃ- ইলতুৎমিশ খলিফাদের থেকে অনুমোদন পান ১২২৯ খ্রিস্টাব্দে। মোহাম্মদ বিন তুঘলক তার আমলে প্রথম মুদ্রায় খলিফার নাম খোদাই করা বন্ধ করে দেন। কিন্তু একসময় ইলতুৎমিস কে যখন কেউই দিল্লির সুলতান বলে মেনে নেয় না তখন ইলতুৎমিস নিজের অধিকার বজায় রাখার জন্য খলিফার অনুমোদন প্রার্থনা করেন। খলিফার কাছে নানা উপহার পাঠান।

৯৫. সুলতান ইলতুৎমিশের সামনে প্রধান তিনটি সমস্যা কী ছিল?
উঃ- প্রথমতঃ কিভাবে সাম্রাজ্যের মধ্যে বিদ্রোহী শক্তিকে সহজেই দমন করা যাবে।
দ্বিতীয়তঃ কিভাবে মধ্য এশিয়ার এক দুর্ধর্ষ মোঙ্গল শক্তিকে মোকাবেলা করা যাবে। তৃতীয়তঃ কিভাবে সুলতানিতে একটি রাজবংশ তৈরি করা যাবে যাতে ইলতুৎমিশের মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারী সহজেই কোনো গোলমাল ছাড়া সিংহাসনে বসতে পারে। এগুলি ছিল সুলতান ইলতুৎমিশের সামনে প্রধান সমস্যা।

৯৬. কারা ছিল সুলতান রাজিয়ার সমর্থক? কারা ছিল তার বিরোধী?
উঃ- রাজিয়ার সমর্থকরা ছিলেন সেনাবাহিনী, দিল্লির সাধারণ লোক এবং অভিজাতদের একাংশ।
তুর্কি অভিজাতরা মনে করতেন রাজিয়া অতুর্কি অভিজাত দের বেশি গুরুত্ব দিতেন। তাই তুর্কি অভিজাতরা গোঁড়া থেকেই তার বিরোধী ছিলেন। এছাড়া রাজপুত শক্তিও তার শাসনের বিরোধী ছিল।

৯৭. আলাউদ্দিন খলজি কীভাবে মোঙ্গল আক্রমণের মোকাবিলা করেন?
উঃ- আলাউদ্দিন খলজির সময়ে দিল্লি দুবার আক্রান্ত হয়। তখন সুলতান আক্রমণ ঠেকানোর জন্য বিরাট সৈন্য বাহিনী গড়ে তোলেন। সৈনিকদের থাকার জন্য সিরি নামে একটি শহর তৈরি করেন। সেই সময় মঙ্গল জাতিরা সাংঘাতিক দুর্ধর্ষ ছিলেন। তাই দুর্গ নির্মাণ, সৈন্য সংগ্রহ ও মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে সফলভাবে মোঙ্গল আক্রমণের মোকাবেলা করেন।

৯৮. ইলিয়াসশাহি এবং হোসেনশাহি আমলে বাংলার সংস্কৃতির পরিচয় দাও।
উঃ- ইলিয়াস শাহী এবং হোসেন শাহী আমলে সংস্কৃতির বিস্ময়কর উন্নয়ন হয়েছিল। এদের সময়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য স্থাপত্য, প্রভৃতি বিষয়ের উন্নতি ঘটেছিল। এই সময়ে সুলতানদের অন্য ধর্ম মতে বিশ্বাসী মনোভাব বা তাদের ধর্মীয় উদারতা বাংলার সব ধর্মের মানুষের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক বা একে অপরের সঙ্গে মিলিত হওয়ার মনোভাব গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল।

৯৯.  ৪.২ মানচিত্র থেকে আলাউদ্দিন খলজির দাক্ষিণাত্য অভিযানের বিবরণ দাও।
উঃ- ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে বারবার অভিযান কারীরা ভারতে এসেছে। মোঙ্গল নেতা চেঙ্গিস খান ঝড়ের গতিতে যে অভিযান চালান তার সামনে বাকি রাষ্ট্রগুলি দুর্বল হয়ে পড়েছিল। আলাউদ্দিন খলজির সময়ে তাদের দ্বারা দিল্লি দুবার আক্রান্ত হয়। আলাউদ্দিন পাঞ্জাব দিল্লী অভিযান করেন। তারপর তিনি চিতোর রণস্তম্বর ও কারা অভিযান করেন। তাতেও তিনি ক্ষান্ত হননি। এরপর তিনি গুজরাট জয় করে ১৩০৫ খ্রিস্টাব্দে মান্দু জয় করেন। তিনি মাদুরাই লাক্ষাদ্বীপ জয় করেন। তার অভিযান এত দূর প্রসারিত হয়েছিল যে তিনি দক্ষিণ ভারতের তাঞ্জোর পান্ড পর্যন্ত জয় করেন। তিনি কাকতীয় হোয়সেল অঞ্চলকেও বাদ দেননি। তিনি ছিলেন দুর্ধর্ষ। তাই তার অভিযানও ছিল দুর্ধর্ষ। তার অভিযানেও কোন দেশ বাদ ছিল না। এভাবে তিনি দাক্ষিণাত্য অভিযানে সফল হয়েছিলেন।

১০০. দিল্লির সুলতানদের সঙ্গে তাদের অভিজাতদের কেমন সম্বন্ধ ছিল তা লেখো।
উঃ- যে সুলতান যত ভাল ভাবে সবদিক সামলাতে পারতেন, তার শাসন ততো বেশিদিন টিকতো। তবে গিয়াস উদ্দিন বলবনের সময় থেকে সুলতানের ক্ষমতার সঙ্গে সঙ্গে মর্যাদাও বাড়তে থাকে। সুলতানরা এতটাই ক্ষমতার অধিকারী ছিল যে তাদের ওপর কেউ কথা বলতে পারতো না। সুলতান কে নিয়ে যদি কেউ বিরোধ প্রকাশ করত তাহলে তাদের শাস্তি পেতে হতো। আলাউদ্দিন খলজির সময়ে অভিজাতদের কড়া হাতে দমন করা হতো। কিন্তু যদি কোনভাবে সুলতানদের শাসন আলগা হয়ে যেতো তাহলে অভিজাতদের ক্ষমতা বেড়ে যেত।

সুলতানরা যেমন অভিজাতকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতেন তেমনি সময় বা সুযোগ পেলে অভিজাতরাও সুলতানদের মান্য করতো না। এছাড়াও অভিজাত ছাড়াও উলেমাদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলতেন সুলতানরা। সুলতানদের পরামর্শ দিত উলেমা। হিন্দু মুসলমান সবাই ছিল মুসলমানদের প্রজা।

১০১. ইকতা কী? কেন সুলতানরা ইকতা ব্যবস্থা চালু করেছিলেন?
উঃ- দিল্লির সুলতানরা সাম্রাজ্যের আয়তন ক্রমশ বাড়িয়ে চলেছেন। নতুন অধিকার করা অঞ্চল থেকে রাজস্ব আদায় করার দরকার ছিল এবং সেখানকার শান্তি বজায় রাখার দায়িত্ব তাদের ছিল। সুলতানরা যেসব রাজ্যগুলির জয় করলেন বা অধিকার করলেন সেইসব রাজ্যগুলিকে একটি প্রদেশের মত ধরে নেওয়া হল। এসব প্রদেশ কে বলা হতো ইকতা। এই ইকতার দায়িত্ব নিয়ে থাকতেন একজন সামরিক নেতা। তাকে বলা হতো ইকতাদার। ইকতাগুলিকে ছোট ও বড় এই দুই ভাগে ভাগ করে নেওয়া হতো। বড়ই ইকতাগুলির দায়িত্ব পালনের জন্য যারা থাকতেন তাদের শুধু সামরিক দায়িত্ব পালন করতে হতো না, প্রশাসনিক দায়িত্বও তাদের পালন করতে হতো। ছোট ইকতাদারগণ শুধুমাত্র সামরিক দায়িত্ব পালন করতেন। সৈন্য বাহিনীর দেখাশোনা করা, বাড়তি রাজস্ব সুলতানদের দেওয়া, দেশের শান্তি-শৃংখলা বজায় রাখা এসব দায়িত্ব বড় ইকতা দরদের ওপর থাকতো। এসব ইকতাদার সম্পূর্ণ হবে সুলতানদের নিয়ন্ত্রণে ছিলেন।

১০২. আলাউদ্দিন খলজির সময় দিল্লির বাজার দর নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে তোমার মতামত লেখো।
উঃ- আলাউদ্দিনের সময় দিল্লির বাজারদর নিয়ন্ত্রণ সুলতানের হাতে যথেষ্ট ছিল। আলাউদ্দিন পুরোপুরি একটি বিরাট সৈন্যদল গঠন করেন এবং সমস্ত সৈন্যদের বেতন নির্দিষ্ট করে দেন। তিনি বাজারের সমস্ত জিনিসের দর নির্দিষ্ট করে দেন। তিনি বাজারদর দেখাশোনা করার জন্য ‘শাহানা ই মান্দি’ ও ‘দেওয়ান ই রিয়াসৎ’ নামে দুই রাজ কর্মচারী নিয়োগ করেন। আমার মতে একটি ভালো বিষয়। এছাড়া সুলতানের ঠিক করা দামের চেয়ে কোন বিক্রেতা দাম বেশি নিলে এবং ক্রেতাকে ঠকালে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা ছিল। আমার মতে এটিও একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

আলাউদ্দিন সাধারন মানুষের সুবিধার্থে রেশন ব্যবস্থা চালু করেন। প্রজাটা যাতে সঠিক সময়ে খাদ্যশস্য ও দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিস পেতে পারে তাই সুলতানরা সবসময় তা তাদের কাছে মজুদ রাখতেন। তাদের সঠিক সময় প্রয়োজনীয় জিনিস যোগান দিতে সুলতান খুবই দায়িত্বশীল ছিলেন। আমি মনে করি সুলতান ঠিকভাবেই বাজারদর নিয়ন্ত্রণ করতেন।

১০৩. বিজয়নগর ও দাক্ষিণাত্যের সুলতানী রাজ্য গুলির মধ্যে সংঘর্ষকে তুমি কি একটি ধর্মীয় লড়াই বলবে? তোমার যুক্তি দাও।
উঃ- বিজয়নগর ও দাক্ষিণাত্যের সুলতানি রাজ্যগুলির সঙ্গে সংঘর্ষ একটি ধর্মীয় লড়াই বলে আমি মনে করিনা। কারণ ধর্ম নিয়ে লড়াই সুলতানি রাজাদের সঙ্গে বিজয় নগরের রাজাদের হয়নি। দাক্ষিণাত্য অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আলাউদ্দিন খলজির সেনাপতি মালিক কাফুর। নদী সুলতানদের শাসনকালে সুলতানদের ক্ষমতা কিছু বেড়েছিল। আলাউদ্দিন হোসেন শাহ ছিলেন মধ্যযুগের বাংলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক। বিজয় নগরের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক ছিলেন তুলুব বংশের কৃষ্ণদেব রায়। তার রাজত্বকালে বিজয়নগরের গৌরব চূড়ান্ত শিখরে উঠেছিল। কৃষ্ণদেব রায়ের মৃত্যুর পর তুলুব বংশের রাজত্বকালেই বিজয়নগরের সঙ্গে সুলতানদের বিরোধ বাঁধে। এই যুদ্ধে বিজয়নগর পরাজিত হয়।

বিজয়নগর ও সুলতান রাজ্যগুলি প্রথম থেকেই একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা একটানা লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রধানত রাজনৈতিক, সামরিক, বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার জন্য এই লড়াই হয়েছিল।

এই পোস্টের pdf পেতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন ⤵️ 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন for "দিল্লির সুলতানী সাম্রাজ্য: সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস।"