কার্লাইল সার্কুলার ও অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি:


কার্লাইল সার্কুলার:

বাঙালিদের ব্রিটিশ বিরোধিতাকে দুর্বল করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসক লর্ড কার্জন প্রশাসনিক অজুহাত দেখিয়ে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ২০শে জুলাই সরকারিভাবে বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন ও বলা হয়, এই পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই অক্টোবর থেকে  আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করা হবে। এর প্রতিবাদে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী যে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে ওঠে তাতে বাংলা তথা ভারতের ছাত্রসমাজ সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করে। ব্যাপকভাবে ছাত্রদের অংশগ্রহণের ফলে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করে। এই পরিস্থিতিতে ছাত্র আন্দোলনের তীব্রতা অঙ্কুরে বিনাশ করার জন্য তৎকালীন বাংলার ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষাসচিব আর ডব্লিউ কার্লাইল ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১০ই অক্টোবর এক দমন মূলক সার্কুলার জারি করেন যা 'কার্লাইল সার্কুলার' নামে পরিচিত।

কার্লাইল সার্কুলারের বক্তব্য:
এই সার্কুলারে বলা হয়, বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে যোগদানকারী ছাত্রদের সরকারি স্কুলকলেজ থেকে বিতাড়িত করা হবে। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই অক্টোবর যেদিন বঙ্গভঙ্গ সরকারিভাবে কার্যকর হয় সেই দিন ব্রিটিশ সরকার লিয়ন সার্কুলার ও ২১শে অক্টোবর পেডলার সার্কুলার জারি করে। লিয়ন সার্কুলারের মাধ্যমে পূর্ববঙ্গে বন্দে মাতরম নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয় এবং বলা হয় আদেশ অমান্যকারী শিক্ষাকেন্দ্রগুলির ছাত্রদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগ করা হবে না।

অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি গঠন:
পেডলার সার্কুলারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকা সরকারি কলেজের ছাত্ররা খালি গায়ে ক্লাসে আসে। ব্রিটিশ সরকারের জারি করা এই সমস্ত সার্কুলারগুলির বিরুদ্ধে কলকাতায় ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ৪ নভেম্বর শচীন্দ্রপ্রসাদ বসুর নেতৃত্বে অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়। অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটির সম্পাদক ছিলেন শচীন্দ্রপ্রসাদ বসু ও সভাপতি ছিলেন কৃষ্ণকুমার মিত্র

অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি গঠনের উদ্দেশ্য ও কর্মসূচি:
অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটি গঠনের উদ্দেশ্য ও কর্মসূচিগুলি হল-
  • বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কৃত ছাত্রদের শিক্ষার বিকল্প ব্যবস্থা করা।
  • অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটির স্বেচ্ছাসেবকদের দিয়ে স্বদেশি দ্রব্য বিক্রির ব্যবস্থা করা।
  • স্বদেশি আন্দোলনের প্রচার ও প্রসার এবং বিদেশি দ্রব্য বয়কট করা।
      বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটির গুরুত্ব অপরিসীম। এটি ছিল সরকারের ছাত্রবিরোধী বিভিন্ন সার্কুলারের যোগ্য জবাব। অ্যান্টি-সার্কুলার সোসাইটির মাধ্যমে স্বদেশি আন্দোলন আরও ব্যাপক আকার ধারণ করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন for "কার্লাইল সার্কুলার ও অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি:"