জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারটি ব্যাখ্যা করো।


স্বকীয়তা রক্ষার জন্য জাতির নিজস্ব রাষ্ট্র গঠনের দাবিকে বলা হয় জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার। অর্থাৎ একটি জাতি যখন একটি রাষ্ট্রের মাধ্যমে তার আত্মপ্রতিষ্ঠার বা স্বাধীন অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সচেষ্ট হয়, তখন তাকে জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার (Right of Self-determination) বলে। মূলত জাতীয়তাবোধের ভিত্তিতে রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে জাতি আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে। এক জাতি এক রাষ্ট্র (one nation one state) এই তত্ত্বকে কেন্দ্র করেই জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার তত্ত্বটি গড়ে উঠেছে। 

জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের বৈশিষ্ট্য: 

জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হল- 

জাতির আত্মপ্রকাশ ঘটে: আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের মাধ্যমে জাতির সুষ্ঠু গুণাবলি, চেতনা, সংগঠন প্রভৃতির আত্মপ্রকাশ ঘটে। 

স্বাভাবিক অধিকারের মর্যাদা পায়: এই অধিকারটি স্বাভাবিক অধিকারের মর্যাদা পায়। জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার না থাকলে জাতিগত বিরোধ, হিংসা, সংঘর্ষ ইত্যাদি অনিবার্য হয়ে উঠত। 

গণতান্ত্রের সহায়ক: গণতন্ত্রের উন্মেষ ও প্রচারে এই অধিকার মূল্যবান। তা ছাড়া সংখ্যালঘু সমস্যার স্থায়ী সমাধান হিসেবেও এই অধিকারকে সমর্থন করা হয়। 

বৃহত্তর স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে: আন্তর্জাতিকতার লক্ষ্যকে কার্যকর করার বৃহত্তর স্বার্থেও এই অধিকার তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। 

জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের পক্ষে বক্তব্যসমূহ: 

জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের পক্ষে মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার একটি সত্তা হিসেবে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে গ্রহণ করার আহ্বান জানান। তাঁর এই প্রস্তাবকে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের শান্তি সম্মেলনে মেনে নেওয়া হয়। 

জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের বিপক্ষে বক্তব্যসমূহ:

জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের বিপক্ষে লর্ড অ্যাকটন জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের স্বীকৃতি ও রূপায়ণকে অবাস্তব বলে চিহ্নিত করেছেন। তাঁর মতে, সমাজে মানুষের সমবায় যেমন সভ্য জীবনযাপনের শর্ত তেমনি বিভিন্ন জাতির এক রাষ্ট্রে মিলেমিশে থাকার বিষয়টি সভ্যতার অপরিহার্য শর্ত। 

    উপরোক্ত আলোচনার নিরিখে বলা যায়, জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার-সম্পর্কিত ধারণা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। তা সত্ত্বেও বলা যায়, সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থা, জাতীয় জনসমাজের দাবির প্রকৃতি ও শক্তি, এই দাবির প্রতি জনসমর্থন, মানবসভ্যতার সার্বিক উন্নতি সবকিছুকে বিচার করেই এই অধিকারের যথার্থতা বিচার করা উচিত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন for "জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারটি ব্যাখ্যা করো।"