জাতীয়তাবাদ বলতে কী বোঝ? জাতীয়তাবাদের সপক্ষে মূল যুক্তি আলোচনা করো।


জাতীয়তাবাদ হল স্বজাতির প্রতি ভালোবাসা। দেশের মানুষকে আপন করে নেবার মানসিকতা। যখন কোনো জনসমষ্টি বংশ, ভাষা, ধর্ম প্রভৃতি কারণে ঐক্যবন্ধ হয় তখন তাদের বলা হয় জনসমাজ। যখন এই জনসমাজের মাঝে রাজনৈতিক চেতনা জাগে, তখন তাদের বলা হয় জাতীয় জনসমাজ। জাতীয় জনসমাজের মানুষেরা প্রত্যেকে অপরের সুখ-দুঃখে সমান অংশীদার বলে মনে করে। অন্য সমাজ থেকে নিজেদের পৃথক বলে ভাবতে শেখে। প্রত্যেকে নিজের ভাষা, ধর্ম, সাহিত্য ইত্যাদির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়। এগুলিকে সংরক্ষণ করার জন্য তাদের মধ্যে পৃথক রাষ্ট্র গঠনের ইচ্ছা জাগে। জাতির প্রতি তাদের এই ভালোবাসা ও একত্ববোধের নাম হল জাতীয়তাবাদ। 

জাতীয়তাবাদের সপক্ষে মূল যুক্তি: 
বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তাঁদের তাত্ত্বিক আলোচনায় জাতীয়তাবাদের ইতিবাচক দিকগুলিকে যেভাবে তুলে ধরেছেন, তা নিম্নে আলোচনা করা হল- 

দেশপ্রেম বৃদ্ধি করে: 
জাতীয়তাবাদ একটি মহান আদর্শ, যা জাতিকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত ও ঐক্যবদ্ধ করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। এই আদর্শ দেশের স্বার্থে ব্যক্তিকে আত্মত্যাগে অনুপ্রাণিত করে। 

পরাধীন জাতির কাছে মুক্তির অগ্রদূত:
জাতীয়তাবাদ পরাধীন জাতিসমূহের কাছে মুক্তির অগ্রদূত রূপে পরিচিত। পরাধীন জাতি জাতীয়তাবাদের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে পরাধীনতার শৃঙ্খলমোচনের আপ্রাণ সংগ্রাম চালায়। এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে যে মুক্তিসংগ্রাম চলেছিল তার উৎস যে উপনিবেশবাদবিরোধী জাতীয়তাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। 

নাগরিক আনুগত্য: 
জাতীয়তাবাদ আনুগত্যের বড়ো শক্তি, এ কথা প্রমাণিত হয় যখন দেখা যায় অন্য যে-কোনো সংগঠনের চেয়ে জাতির প্রতি মানুষের ভক্তি-ভালোবাসা অনেক বেশি। তাই আনুগত্য জাতির মানসিক গঠন ও শক্তির পরিচয়রূপে কাজ করে। 

মানবসভ্যতার অগ্রগতির সূচক: 
জাতীয়তাবাদ মানবসভ্যতার বিকাশের সহায়ক, কারণ এর মাধ্যমেই পরাধীন জাতির মুক্তির মন্ত্র ধ্বনিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে তৃতীয় বিশ্বের বহু দেশে জাতীয়তাবাদই তৃতীয় বিশ্বের জাতিগুলিকে নতুন চেতনা ও শক্তিতে উদ্বুদ্ধ করে মানবসভ্যতার উন্নতিতে সাহায্য করেছে। 
উদাহরণস্বরূপ- এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, ইথিওপিয়া, লিবিয়া, উগান্ডা প্রভৃতি।

সুশাসন সম্ভব: 
জাতীয়তাবাদ দেশের শাসনব্যবস্থাকে স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল করে তোলে। এর ফলে দেশে শাসক-শাসিতের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে বলেই আইনের নির্দেশ ও আইন মান্য করার মধ্যে সমতা বজায় থাকে। 

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহায়ক: 
জাতীয়তাবাদ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সহায়ক। জাতীয়তাবাদের আদর্শ কালক্রমে উদারনৈতিক গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার আদর্শের জন্মদাতা হিসেবে ভূমিকা পালন করে। এইরূপ জাতীয়তাবাদী আদর্শ বিভিন্ন জাতিকে নিজেদের স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অনুপ্রাণিত করে, অপরদিকে তাদের গণতন্ত্রের প্রতি আকৃষ্ট করে তোলে। 

পরিশেষে বলা যায়, জাতীয়তাবাদের পক্ষে যুক্তিগুলি মানবসভ্যতার কাছে আর্শীবাদ রূপে বিবেচিত হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন for "জাতীয়তাবাদ বলতে কী বোঝ? জাতীয়তাবাদের সপক্ষে মূল যুক্তি আলোচনা করো।"